যন্ত্রণায় জেরবার। জমির অধিকার না মেলার যন্ত্রণা। ভিটে হারানোর যন্ত্রণা। এমনকী, ছিটমলের মতো যন্ত্রণা। তবু শারদোৎসবে মেতেছে প্রধাননগরের বাঘাযতীন কলোনি। তারা এবার গণতন্ত্রের মন্দির পুরনো সংসদ ভবন গড়ছে। তাতে থাকবে দশভুজা। আর বাংলার মনীষী ও বিপ্লবীদের ছবি, সংগ্রামের কাহিনি। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, এবার এই মণ্ডপেই দেবী দুর্গার কাছে যন্ত্রণা নিবারণের প্রার্থনা জানানো হবে।
শিলিগুড়ি শহরের উদ্বাস্তু কলোনিগুলির মধ্যে প্রধাননগরের বাঘাযতীন কলোনি একটি। এই কলোনির একদিকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আরএকদিকে মহানন্দা নদী। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বেশকিছু পরিবার ভিটে ছাড়া হয়েছে। আবার কিছু বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলেও পাননি জমির পাট্টা। আবার দার্জিলিং জেলার এই কলোনির কিছু অংশ জলপাইগুড়ি জেলার মৌজায়। যা ছিটমহলের মতো!
স্থানীয়রা বলেন, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ৩৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। আর ৪০ বছর ধরে বসবাস করলেও ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা জমির পাট্টা পাননি। এরবাইরে কিছু বাসিন্দার জমি জলপাইগুড়ি জেলার মৌজায় পড়ছে। সেই জমির একাংশের শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি। যা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ম্যাপে নদীর চর হিসেবে উল্লেখিত। সংশ্লিষ্ট অংশের বাসিন্দারা ‘ছিটমহলবাসীর’ মতো যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এসবই এখানকার মারাত্মক সমস্যা।
এতকিছুর পরও বাঘাতীন কলোনি মেতেছে শারদোৎসবে। কলোনিতে এখন সাজ সাজ রব। করছে থিম পুজো। এবার থিম— পুরনো সংসদ ভবন। বাঁশ, কাঠ, কাপড় দিয়ে স্থানীয় স্কুলের মাঠে বানানো হচ্ছে মণ্ডপ। বাঘাযতীন কলোনি ভাই ভাই সংঘের সহযোগিতায় এই পুজো করছে করুনাময়ী কালীবাড়ি দুর্গাপুজো কমিটি। ভাই ভাই সংঘের সম্পাদক লিটন পাল বলেন, সংসদ ভবনের উপরের অংশে অফ হোয়াইট ও নীচের অংশে গেরুয়া কাপড় থাকবে। থাকবে মানানসই প্রতিমা। সেই সঙ্গে মণ্ডপের ভিতরের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, নেতাজি, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘাযতীনের ছবি ও লড়াইয়ের কাহিনি থাকবে।
এবার মাতৃবন্দনায় কলোনির সমস্যা মেটানোর প্রার্থনা করা হবে। ভাই ভাই সংঘের সম্পাদক বলেন, এই পুজোর বয়স ৪৫ বছর। সকলকে দেশের ‘গণতন্ত্রের মন্দির’ পুরনো সংসদ ভবন দর্শন করাতেই এমন থিম করা হয়েছে। দশভুজার পাশাপাশি বাংলার মনীষী ও বিপ্লবীদের ছবি থাকবে। এই থিম প্রশংসিত হবে বলেই আশা করছি। সেইসঙ্গে কলোনিবাসীর সমস্ত যন্ত্রণা দূর করার প্রার্থনা উমার কাছে জানানো হবে। স্থানীয়দের কয়েকজন বলেন, পুনর্বাসন, পাট্টা ও জমিজট দ্রুত কাটানোর প্রার্থনা জানাতেই গণতন্ত্রের মন্দিরে দশভুজাকে বসিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর আস্থা রয়েছে। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অনেক সুবিধাও মিলেছে। সংশ্লিষ্ট কলোনি পুরসভার ১ নম্বর বরোর অধীনে। বরো চেয়ারম্যান গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, কলোনিবাসীর ওই সমস্যাগুলি দ্রুত মেটানো হবে। এ ব্যাপারে পুরসভা যথেষ্ট উদ্যোগী।