• শিবনিবাসে রায়চৌধুরীদের দ্বিভুজা উমাকে নিয়ে মাতোয়ারা গোটা গ্রাম
    বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক  কৃষ্ণনগর

    কেশের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে অশুভ শক্তির বিনাশে দেবীর রহস্যময় ক্ষমতা! বাইরে থেকে বোঝার জো নেই। কেননা, দেবী এখানে দশভুজা নন, দ্বিভুজা। ভক্তদের বিশ্বাস—সেই দু’টি হাতের আড়ালেই বিরাজ করে মায়ের বাকি আটটি হাতের অপরিসীম শক্তি। তাই হয়তো কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাস অঞ্চলের পাবাখালি গ্রামে অবস্থিত রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোকে নিয়ে দূরদূরান্তের মানুষের এতবেশি কৌতূহল। চারশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই পুজো ইতিহাসের সাক্ষীও। সময়ের ধুলো জমে থাকা অতীতকে প্রতি বছর নতুন করে জীবন্ত করে তোলা হয় রায়চৌধুরীদের বাড়িতে। গোটা গ্রামও ফিরে যায় চারশো বছর আগে। 

    পুজোর ক’দিন আগে থেকেই গ্রামজুড়ে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। কুমোরপাড়ার ব্যস্ততা। ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে অলিগলি।সন্ধ্যা নামলেই ঢাকের বাদ্যি। মণ্ডপের চারপাশে হরেক আলোর মালা। ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি। জমতে শুরু করে ভক্তরা।আনন্দঘন পরিবেশ চতুর্দিকে।সব মিলিয়ে পুজোর ক’দিনপাবাখালি যেন হয়ে ওঠে রূপকথার গ্রাম।

    রায়চৌধুরীদের এই পুজোর শেকড় বাংলাদেশের যশোর জেলার মহেশপুরে। সেখানেই বর্তমান বংশধরের ৩৬ পুরুষ আগে পুজো শুরু।দেশভাগের পর, ১৯৪৯ সালে রায়চৌধুরী পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। বাসস্থান গড়ে তোলে পাবাখালিতে। সেই থেকে পুজো হচ্ছে এখানে। স্থান বদলে গেলেও পুজোর রীতি, ভক্তি একটুও বদলায়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুজোর একই ধারা বহমান। 

    রায়চৌধুরী পরিবারের বংশধর পানিই রায়চৌধুরী বলেন, ‘দেবী এখানে দ্বিভুজা রূপে বিরাজমান। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় দেবী সাদামাটা, কেবল দু’টি হাত রয়েছে তাঁর। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, এই রূপের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে শান্তি ও শক্তির অপার প্রতীক। প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো করে। প্রতিটি ধাপে শিল্পীর যত্ন আর ভক্তির ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে প্রাণ পায় দেবীর রূপ।’ তিনি জানান, সপ্তমীর দিন হোমকুণ্ডে পবিত্র আগুন জ্বালানো হয়। আর নবমীতে অনুষ্ঠিত হয় মহাআহুতি। ভোগে থাকে স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রতীক কলাই ডাল এবং আমন ধানের চাল।

    রায়চৌধুরীদের পুজো আচারে আরও একটি গুরুত্ব প্রথা হল,শূন্যে বন্দুকের গুলি চালিয়ে সন্ধিপুজোর সূচনা। শতাব্দী প্রাচীন এই নিয়মের রহস্য আজও অজানা। সন্ধিপুজো শুরু হওয়ার আগে প্রথমে দেখা হয় প্রদীপের শিখা। যদি শিখা সোজা থাকে, তবেই সংকেত মেলে গুলি চালানোর। মুহূর্তে গর্জে ওঠে বন্দুক। ঢাকের বোলের সঙ্গে মিশে যায় দেবীর নামজপ। পুরো গ্রাম একযোগে মেতে ওঠে ভক্তির আবেগে। দশমীর দিন সূর্যাস্তের ঠিক আগের মুহূর্তে গ্রামবাসী এবং রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা দেবীকে কাঁধে তুলে নিয়ে যান শিবনিবাসের চূর্ণী নদীর ঘাটে। সেখানেই বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীকে।
  • Link to this news (বর্তমান)