• জেলার ১৭টি পুজোর উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর, শুরু কাউন্টডাউনও
    বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট এবং সংবাদদাতা করিমপুর: কাশফুলের শুভ্র ঢেউ যেন নদীয়া জেলাজুড়ে পুজোর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। ভোরের কুয়াশায় ভেসে আসছে দূর থেকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের আওয়াজ আর মহিষাসুরমর্দ্দিনীর সুর। আকাশে হালকা শীতের আমেজ, পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের সাজসজ্জা আর মানুষের ব্যস্ততা— সব মিলিয়ে এখন চারদিকে একটাই অনুভূতি, ‘পুজো আসছে!’ মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর কাউন্টডাউন। নদীয়া জেলার মানুষ ভাসছে উৎসবের আনন্দে। তার মধ্যেই রবিবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার ৯টি এবং রানাঘাট পুলিশ জেলার ৮টি পুজোর পুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

    মহালয়ার ভোর থেকেই জেলার চারটি মহকুমায় ছিল উৎসবের আবহ। ঘরে ঘরে বাজছিল মহিষাসুরমর্দ্দিনীর সুর। অনেকেই গঙ্গা বা স্থানীয় পুকুরঘাটে গিয়ে তিলোত্তমা ও তর্পণ সারেন। রানাঘাট, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর এবং তেহট্ট মহকুমার বড় বড় পুজো মণ্ডপে শুরু হয়েছে উদ্বোধনের পালা। এ বছর জেলার মোট ১৭টি পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় রয়েছে রানাঘাট মাহুতপাড়া নব কল্যাণ সংঘ, তাহেরপুর সম্মিলনী ক্লাব, শান্তিপুর পশ্চিম মাঠপাড়া দুর্গাপুজো কমিটি, হাঁসখালি নবারুণ সংঘ এবং গাংনাপুর স্পোর্টিং ক্লাবের নাম। রানাঘাটের মাহুতপাড়া পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন রানাঘাটের চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রানাঘাটের মহকুমা শাসক ভরত সিং। কল্যাণীর লুমিনাস এবং রথতলার পুজোয় উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক অভিজিৎ সামন্ত। সেইসঙ্গে আইটিআই ব্যবসায়ী সমিতি, রথতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি এবং সিংহের বাগান দুর্গাপুজো কমিটির পুজো উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাকাশিপাড়া থানার ধর্মদা যুব সংঘের পুজো এ বছর ৭৮ বছরে পদার্পণ করল। তাদের থিম মায়াপুরের ইসকন মন্দির।  পাশাপাশি ধুবুলিয়া ৬ নম্বর গ্রুপ দুর্গাপুজো কমিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। চাপড়ার হেভেন ক্লাবের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক রুকবানুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী উৎসবকে প্রতিটি বাঙালির ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছেন। তাঁর ভার্চুয়াল উদ্বোধন এই জেলার মানুষের কাছে এক অনন্য আনন্দ। পাশাপাশি, এদিন করিমপুর এলাকায় তিনটি পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুরুটিয়া থানার কেচুয়াডাঙ্গা দিশারী সঙ্ঘের পুজো উদ্বোধনে মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়, পুলিশ আধিকারিক ছাড়াও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। একই ভাবে করিমপুর থানার জামতলা যুবগোষ্ঠী ক্লাবের এবং হোগলবেড়িয়া থানার তারাপুর এভারগ্রিন ক্লাবের দুর্গাপূজার উদ্বোধন হয়।

    এখন নদীয়া জেলায় একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। বাজারে ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। নতুন পোশাক, প্রসাধনী, উপহার সামগ্রী, খাবার— সমস্ত দোকানে জমজমাট ব্যবসা। বিশেষ করে কৃষ্ণনগরের, রানাঘাটের এবং কল্যাণীর বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে নদীয়া জেলার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন উমার আগমনের। চারদিনের উৎসবের অপেক্ষায় দিন গুনছে মানুষ। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হওয়া পুজোর কাউন্ট ডাউন যত এগচ্ছে, ততই বাড়ছে উৎসবের আমেজ। এখন যেন চারপাশে একটাই সুর বাজছে— ‘মা আসছেন, পুজো আসছে!’
  • Link to this news (বর্তমান)