• শান্তিপুরে চাঁদুনী বাড়ির পুজো, নবমীর ভোগে থাকে ইলিশের ঝাল
    বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: নদীয়া জেলার শান্তিপুরে একাধিক প্রাচীন দুর্গোৎসবের মধ্যে অন্যতম চাঁদুনী বাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো এই দুর্গাপুজো জেলার প্রাচীনতম দুর্গা আরাধনাগুলির মধ্যে অন্যতম। চাঁদুনী বাড়ি যেন শান্তিপুরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর বিশেষত্ব নবমীর দিন ইলিশ মাছের ঝাল ভোগ। পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান ব্যাতিক্রমী আচার। যার সাক্ষী হতে প্রতিবছর ভিড় জমান এলাকাবাসী ও দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা। 

    শান্তিপুরকে বলা হয় শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের মিলন ক্ষেত্র। চাঁদুনী বাড়ির পুজো সেই ধারারই এক অনন্য উদাহরণ। এখানে যেমন দুর্গা ও কালীর মতো শক্তির আরাধনা হয়, তেমনই পূজিত হন বিষ্ণু, গোপাল, লক্ষ্মী, ষষ্ঠী এবং শিব—অর্থাৎ পাঁচ দেবতার উপাসনা একত্রে চলে। পারিবারিক নিয়ম মেনে জন্মাষ্টমীর পরদিন নন্দ উৎসবের সময় দুর্গামূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। প্রথমে ঠাকুরমশাই দেবী মূর্তির পায়ে মাটি দেন, তার পর মৃৎশিল্পীর হাতে ধীরে ধীরে প্রাণ পায় মহামায়ার প্রতিকৃতি। এই আচারের ব্যতিক্রম হয় না কখনওই। দুর্গার বাহন সিংহ এখানে ঘোড়ার মতো, যা শাক্ত মতে প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। ষষ্ঠীর দিন গৃহবধূরা গঙ্গা থেকে জল এনে দেবী ঘট ভরিয়ে আনেন, সেই জলেই নবপত্রিকা স্নান হয়। বিকেলে পাটে ওঠেন দেবী, আর রাতেই হয় বরণ। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত চলে পারিবারিক আচার-বিধি মেনে পূজা। একসময়ে পশুবলির প্রথা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়েছে, পরিবর্তে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

    এই পুজোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নবমীর ভোগ— যেখানে নানা ভাজার পাশাপাশি থাকে ইলিশ মাছের ঝাল। আর দশমীতে মাকে দেওয়া হয় পান্তাভাত, সঙ্গে ইলিশ মাছের টক সহ অন্যান্য পদ। গ্রামের পুরনো রীতি অনুযায়ী, বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি ফেরা মেয়েরা যেভাবে বাসি খেত, সেই আচার মেনেই উমাকেও সাজানো হয় ‘পান্তাভাতের’ ভোজে। দেবী মূর্তি হয় একচালায়, মাটির সাজে। দেবদেবীদের পরণের কাপড়ও হয় মাটির তৈরি। দশমীর নিরঞ্জনের সময়ে মাকে সাজিয়ে দেওয়া হয় তেল-মশলার বিভিন্ন সামগ্রী, যা নিয়ে তিনি প্রতীকীভাবে ফিরে যান শ্বশুরবাড়ি। পরিবারের ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলাও দর্শনার্থীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। চাঁদুনী বাড়ির বর্তমান বংশধর পিতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এই আচার ও নিয়মই আমাদের পুজোকে স্বতন্ত্র করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই রীতি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)