ছাত্রী খুনের কিনারায় পুলিশকে ১৫ দিনের জন্য আলটিমেটাম, দাবি পূরণ না হলে রাজ্য অচল করার হুঁশিয়ারি
বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাটে নাবালিকা ছাত্রীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় পুলিশকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন আদিবাসীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রাজ্য অচলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। রবিবার ছাত্রীর বাড়ি লাগোয়া মাঠে স্মরণসভায় সমস্ত আদিবাসী সংগঠন একত্রিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা পুলিশের চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছে।
নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রীকে নৃশংস খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন স্কুলের সামনে রামপুরহাট-দুমকা রোড অবরোধ করেন আদিবাসীরা। অররোধ তুলতে এসে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশ কর্তাদের। তাড়া করে পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করেন আন্দোলনকারী পুরুষ ও মহিলারা। তাঁরা পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। অবরোধে জেরে বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃরাজ্য পরিবহণ ব্যবস্থা। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ভিন রাজ্যের যানবাহন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক মনোজ পালকে ধরার পর তিনদিন রেখে কেন ছেড়ে দেওয়া হল? তাকে ছাড়াতে থানায় কারা গিয়েছিল এবং সেই সময়কার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করতে হবে। মৃত ছাত্রীর বাকি দেহংশ (দুটি হাত ও দুটি পা) অতিশীঘ্রই পরিবারকে দিতে হবে। তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার জুলি সাহাকে সাসপেন্ড করতে হবে। অভিযুক্ত শিক্ষকের ফাঁসি দিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরও কোনও পদক্ষেপ না করায় প্রধান শিক্ষককেও সাসপেন্ড করতে হবে। মৃতের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে এবং এই খুনে আর যারা জড়িত, তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। স্কুল চলাকালীন পুলিশ মোতায়েন করতে হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে মনোজ পালকে ফাঁসি দিতে হবে। তা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন জারি থাকবে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের এই দশ দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ মুক্ত হয় ১১৪ এ জাতীয় সড়ক। দাবিপত্রে পুলিশ কর্তাদের সইও করিয়ে নেন আন্দোলনকারীরা।
যদিও তারপর কেটে গিয়েছে তিনদিন, তদন্তকারী অফিসারকে ক্লোজ করা ছাড়া কোনও দাবিই এখনও পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ আদিবাসী সমাজের। রবিবার ছাত্রীর বাড়ি লাগোয়া মাঠে স্মরণসভার আয়োজন করে আদিবাসী সমাজ। সেখানে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ছাড়াই হাজির হয়েছিলেন। এই স্মরণসভার জন্য মালিকরা এদিন পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ রেখেছিল। সেখানে ছাত্রীর ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সকলে। ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের নেতা ঘাঁসিরাম হেমব্রম বলেন, তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানায়নি। ১৩ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা থানায় গিয়ে খোঁজখবর নেব। তিনি বলেন, এখনও ছাত্রীর দেহের অবিশিষ্ট অংশ পাওয়া যায়নি। পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। যদি নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তৎপর হতো, তাহলে হয়তো এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটত না বা দেহ এভাবে পচেগলে যেত না। স্কুল কর্তৃপক্ষেরও চুড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে। ওই শিক্ষক যে ছাত্রীটিকে উত্যক্ত করত, বিয়ের প্রস্তাব ও টাকার লোভ দেখিয়েছিল সেটা পরিবার জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ করেননি। যার জন্য আদিবাসী সমাজ খেপে রয়েছে। তাঁকে এখান থেকে সরাতে হবে। আদিবাসী সমাজের সন্দেহ, এই নৃশংস হত্যার ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে। মঙ্গলবার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে এই বিষয়ে বসতে চলেছেন তাঁরা। যদিও আদিবাসীরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক নামেই। স্কুল চালাত মনোজ পাল ও এক সহকারী শিক্ষক। তারাই শেষ কথা বলত। যদিও প্রধান শিক্ষক এই অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। এদিকে ঘাঁসিরাম বলেন, আমরা দাবিপূরণের জন্য পুলিশকে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে দাবিপূরণ না হলে শুধু বীরভূম নয়, পুরো রাজ্য অচল করে দেব। রাজ্যের আদিবাসী সমাজ রাস্তায় নামবে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রীর দেহের অবশিষ্ট অংশ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। -নিজস্ব চিত্র