• দুর্গাপুরে তৃণমূল নেতা খুনে থমথমে কমলপুর, চাঞ্চল্য
    বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: শনিবার দুর্গাপুরের কমলপুরে বাগানবাড়ি থেকে প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা নিখিল নায়েকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা নায়েক দুর্গাপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন। তাঁর দাবি, বাবার কোনও ঘনিষ্ঠই অন্য কারও নির্দেশে পরিকল্পনা করে খুন করেছে। কিন্তু কে, কোন উদ্দেশ্যে খুন করল? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে। সেই সূত্র ধরেই উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য‌। চারমাস আগে নিজের বাগানবাড়ি থেকে ফেরার পথে নাকি তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। কয়েকজন দুষ্কৃতী মুখ বেঁধে লাঠি নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করে। সেই সময় দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন নিখিলবাবু। কিন্তু এই ঘটনায় তিনি থানাতেও লিখিত অভিযোগ করেননি। ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি বললেও প্রকাশ্যে এনিয়ে আলোচনা না করার কথা বলেছিলেন। কেন প্রাণঘাতী আক্রমণ ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন নিখিলবাবু? তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

    ঩দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে দলের উচ্চ নেতৃত্বর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সম্বলিত একটি চিঠি জমা পড়ে। চিঠির প্রেরক নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। সেখানে কিছু মহিলা সম্পর্কিত অভিযোগ তোলা হয়েছিল। দল তা নিয়ে তদন্তও করেছিল। আর ঠিক সেই জায়গা থেকেই উঠে আসছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি। মহিলাঘটিত কোনও কারণ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কি একটি অংশের শত্রুতা তৈরি হয়েছিল? 

    দলীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তাঁর পরিবারের এক সদস্য বিজেপির নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তা নিয়ে পারিবারিক টানাপোড়েন ছিল। কেউ কেউ এই পারিবারিক টানাপোড়েনের পিছনে সম্পত্তিজনিত বিবাদের প্রসঙ্গও তুলেছেন। যদিও মৃতার শ্যালক সৌমিত্র কোনার বলেন, জামাইবাবু সব সম্পত্তি পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে দিয়েছেন। তাই এই বিষয়টি ঠিক নয়। কেন তিনি আগের আক্রমণের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছিলেন, তা আমাদের কাছেও পরিষ্কার নয়। 

    এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাগানবাড়িটি অত্যন্ত নির্জন স্থানে। মাত্র দু’কক্ষের একটি দু’তলা ঘর, তার বাইরে প্লাস্টার নেই। দূরে পরিচারকদের জন্য একটি মাটির ঘর রয়েছে। সংকীর্ণ রাস্তা পেরিয়ে গাছে ঢাকা এই এলাকাতেই বেশি সময় কাটাতেন বলে পরিবার ও অনুগামীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। সেখানে আসতেন তাঁর ঘনিষ্ঠরাই। 

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর মাথার পিছনে একটি আঘাতের চিহ্নও দেখা গিয়েছে। পাশে একটি মরা মুরগিও পাওয়া যায়। নিখিলবাবুর খাবারে কি বিষ দেওয়া হয়েছিল? যা খেয়ে মুরগিটিও মারা গিয়েছে। তা জানতে পুলিশ খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি সেই ঘটনাস্থল ঘিরে রেখে পুলিশ। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। কমলপুর ও রঘুনাথপুরজুড়ে থমথমে পরিবেশ রয়েছে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে চলছে জটলা। এদিন ময়নাতদন্তের জন্য দেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পাশাপশি বিকেলে ঘটনাস্থলে আসে ফরেনসিক টিম। এসিপি সুবীর রায় বলেন, আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।  ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)