নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেলা পৌনে চারটে। হাতিবাগান সর্বজনীনের বাইরে ইতিউতি ভিড়। আবদার একটাই, ‘উদ্বোধন তো হয়ে গিয়েছে। মণ্ডপে ঢুকতে দিন না প্লিজ! অনেকটা দূর থেকে এসেছি।’ উদ্যোক্তাদেরও স্পষ্ট বক্তব্য, ‘ঢোকা যাবে না। মণ্ডপ ২৫ সেপ্টেম্বর খুলবে।’ হাতিবাগান নবীন পল্লিতেও ‘না’ বলতে বলতে উদ্যোক্তাদের মুখ ব্যথা হওয়ার উপক্রম। ‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর শ্রীভূমি তো খুলে দিয়েছে। আপনারা কেন ঢুকতে দিচ্ছেন না?’ নলিন সরকার স্ট্রিট, কাশী বোস লেন, চালতাবাগান... কিংবা দক্ষিণের হিন্দুস্তান পার্ক, বালিগঞ্জ কালচারাল, ত্রিধারা—ছবিটা সর্বত্র কমবেশি এক। মহালয়া হয়ে গিয়েছে মানেই পুজো শুরু। তার উপর রবিবারের ছুটি বলে কথা। যাকে বলে একেবারে পুজোর আমেজ। বহু মণ্ডপে চলছে ফিনিশিং টাচ! চলুক। তাতে উৎসাহে ভাটা ফেলা যাবে না। নাছোড় এ শহর। নাছোড় এ শহরতলিও। পুজোর আগে শেষ রবিবার। অমাবস্যা কাটলে দেবীপক্ষ। তাই স্লগ ওভারের শপিংয়ের সঙ্গে হপিং চাইই চাই। মণ্ডপের সামনে গেলেই কানে ভেসে এসেছে অনুরোধ, ‘কেনাকাটা করতে এসেছি। অনেক দূরে বাড়ি। একটু দেখতে দিন... প্লিজ!’ মাথা নাড়লেন উদ্যোক্তারা—‘হবে না। কাজই তো শেষ হয়নি! আর দেবীপক্ষ না পড়লে প্যান্ডেল ওপেন করব কীভাবে?’ অগত্যা এক ব্যাগ জামাকাপড়ের সঙ্গে খানিক আপশোশ নিয়েই বাড়ির পথে। কেউ উঁকি মারলেন ভিতরে, যদি ‘মাকে’ এক চিলতে দেখা যায়। কেউ দাঁড়িয়ে পড়লেন মণ্ডপের সামনে। একটা সেলফি অন্তত হয়ে যাক!
এবার পুজোয় ভয় ধরিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দপ্তর। বৃষ্টি নাকি হচ্ছেই। তাতে অবশ্য এ শহরের কুছ পরোয়া নেই। শুধু একটু সতর্কতা। ছুটি এবং মেঘহীন আকাশ একপাতে পড়লেই বেরিয়ে পড়া হই হই করে। মহালয়া ছিল তার যোগ্য সূত্রধর। তার উপর ওই যে, ‘শ্রীভূমি খুলে গিয়েছে’। লেকটাউন চত্বরে ভিড় জমল তাই রবিবার বিকেল থেকেই। আনুষ্ঠানিকভাবে সময় দেওয়া আছে রাত ৮টা নাগাদ। কিন্তু পুজোপ্রেমীদের মন যে সময় মানে না! শ্রীভূমি তাই ‘ভিড়ক্ষেত্র’। বেহালা এসবি পার্ক, বড়িশা ক্লাবও কিন্তু দর্শকদের ‘না’ বলেনি। তাই উদ্বোধনের আগেই সেখানে মণ্ডপমুখীদের আনাগোনা। সঙ্গী যানজট।
বিধান সরণি, শোভাবাজার মেট্রো যাওয়ার রাস্তা, হাতিবাগান অঞ্চল, খান্নায় যানজট তীব্র ছিল। উল্টোডাঙা থেকে খান্নাগামী রাস্তায় সিগন্যাল যেন সবুজ হচ্ছেই না। ‘শপিংগামী’ ভিড় ফুটপাত ছেড়ে নেমে আসছে সড়কে। তা সে নিউমার্কেট-ধর্মতলা চত্বর হোক বা হাতিবাগান। পোশাক বিক্রেতা দুর্গা রায় বলছিলেন, ‘হাতিবাগান অঞ্চলে দু’সপ্তাহ আগেও বিক্রি মোটের উপর ঠিকঠাক ছিল। কিছুতেই ‘বুমিং’ হচ্ছিল না। শেষ ল্যাপে সেই খরা কেটেছে।’ গড়িয়াহাটের ছবিটাও এক। এদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই ভিড়। শেষ মুহূর্তের কানের দুল, হাতের ক্রিস্টাল ব্যান্ড, ক্লিপ কেনার ঢল। জামাকাপড়ে দোকানেও উঁকি মেরে কাউন্টার খুঁজতে হচ্ছে। ক্রপ টপ, পালাজো কেনার ধুম চরমে। পুরোপুরি উৎসবের মুড। চোখ ফেরালে যে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পুজো এসে গিয়েছে। শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে প্রেমিক-প্রেমিকারা ঢুঁ মারছেন... কেউ মণ্ডপে, কেউ রেস্তরাঁ, কারও আবার শুধু পথই সাথী। দুপুরে কলেজ গ্রুপের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন প্রমিত-ঈশিকা। বাঙালি রেস্তরাঁয় পেটপুজোর সঙ্গেই চলল পুজো প্ল্যানিং। ঠোঁটের কোণে একফালি হাসি টেনে ঈশিকা বললেন, ‘আগামী বছর প্রমিতের সঙ্গে বিয়ে। মানে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে শেষ পুজো।’ অনেকে জামাও কিনতে এসেছেন পাটভাঙা পোশাকে। যেমন বহ্নি সেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, কেনাকাটা শেষ করেই শ্রীভূমি। ঠাকুর দেখে সল্টলেকে ডিনার। আক্ষেপ একটাই, ‘বাকি মণ্ডপগুলো খুলে গেলে আরও ভালো হতো। আকাশের মুখ যখন তখন ভার হয়ে যেতে পারে।’