নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কুমোরটুলির মতো ভিড় না হলেও দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের পটুয়াপাড়ায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা তুঙ্গে। অনেক মণ্ডপেই মহালয়ার দিন ঠাকুর ডেলিভারি করতে হবে। তাই দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পীদের। আবার এই চত্বরে বাড়ির ঠাকুর তৈরির বায়নাও আসে যথেষ্ট। ছোট ছোট ঠাকুর তৈরির কাজ চলছে পটুয়াপাড়ার অলিগলিতে। কাজ করতে করতেই ভিডিও কলেও কথা বলতে হচ্ছে মৃত্ শিল্পীদের। কারণ, পুজো উদ্যোক্তা কিংবা বনেদি বাড়ির সদস্যরা শিল্পীদের ভিডিও কল করে ঠাকুরের কাজ কতটা এগল, তা দেখে নিচ্ছেন। এতে যদিও খুব একটা বিরক্ত নন শিল্পীরা। তাঁরা বলছেন, এখন তো প্রযুক্তির সুবিধা হয়েছে। তাই স্বশরীরে না এসে লোকে ফোনেই দেখে নিচ্ছেন।
মহালয়ার প্রাক্কালে পটুয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, একেবারে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। কালীঘাটের শিল্পী বুবুন বলছিলেন, ‘এখন আমাদের আর দম ফেলার সময় নেই। অনেকেই মহালয়ার দিন ডেলিভারি চায়। তাই এখন শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।’ আর এক শিল্পীর কথায়, ‘বাড়ির ঠাকুর মোটামুটি চতুর্থী কিংবা পঞ্চমীতে যায়। কিন্তু বারোয়ারি পুজো উদ্যক্তাদের অনেকে ঠাকুর আগে চান। সেই অনুযায়ী মণ্ডপের গেট তৈরি করেন।’ পটুয়াপাড়ার মুখেই দেখা গেল, শিল্পী এক মনে দুর্গা ঠাকুরের মুখ তৈরি করছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘মায়ের মুখ এখানে তৈরি করে নিচ্ছি। তারপর মূর্তিতে বসানো হবে।’ এই গোটা প্রক্রিয়ার উপর কড়া নজর রেখেছেন কারখানার মালিক। অন্যদিকে, এই কাজ করতে করতেই পাশে একটি দুর্গা মূর্তির চক্ষুদান শেষ হল। মালিক সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, মুখের ছবিটা তুলে পাঠিয়ে দে। সেই ছবি তত্ক্ষণাত্ চলে গেল পুজো উদ্যোক্তাদের স্মার্টফোনে।
পাশের একটি দোকানেই দেখা গেল, শিল্পী ব্যস্ত রয়েছেন ভিডিও কলে। দুর্গা প্রতিমা যতখানি হয়েছে, ভিডিও কলেই তা দেখিয়ে দিলেন উদ্যোক্তাদের। ফোনের ওপার থেকে আবার কিছু নির্দেশও এল। পটুয়াপাড়ার ঠিক পাশের গলিতে একটি ঘরের ভিতর চলছে বাড়ির ঠাকুর তৈরির কাজ। শিল্পীর কথায়, ‘আবহাওয়া ভালো থাকলে তো আমাদের কোনও অসুবিধা হয় না। গত কয়েকদিন তো ভালোই রোদ রয়েছে। তাই আমাদের কাজও পুরোদমে চলছে।’
তবে এই চত্বরে এখনও কুমোরটুলির মতো ফটো শিকারিদের ভিড় হয়নি। সেখানকার মৃৎশিল্পীদের কথায়, ‘এখানেও আজকাল লোকজন আসছে। তবে সেভাবে নয়। জানি না হয়ত কয়েক বছর বাদে এখানেও ভিড় শুরু হবে।’ নিজস্ব চিত্র