‘কাটছে আমাদের টাকা, প্রচার হচ্ছে ওদের’, জিএসটি ইস্যুতে মোদিকে খোঁচা মমতার...
আজকাল | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার থেকে সারা দেশে চালু হতে চলেছে জিএসটি ২.০। রবিরার বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে এই কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিকে, মোদির ভাষণের পরেই কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মহালয়ার দিনে শহর এবং জেলার একাধিক দুর্গাপুজো উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনের মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘জিএসটির কৃতিত্ব রাজ্যের। ভাষণ দেওয়া ছাড়া কেন্দ্রের কোনও অবদান নেই’। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাটল টাকা আমাদের, প্রচার হচ্ছে ওঁদের’। তিনি দাবি করেন, রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের টাকা বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। সেই টাকা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, রবিবার সেলিমপুর পল্লী দিয়ে শহরের দুর্গাপুজোর উদ্বোধনের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর পাশাপাশি বাবুবাগান, বান্ধব সম্মিলনী, যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লী-সহ কলকাতার একাধিক পুজোর উদ্বোধন করেন। অন্যদিকে, ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন জেলার বিভিন্ন পুজোরও। সেখান থেকেই তিনি ক্ষোভ উগরে দেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, মানুষ প্রায়ই জানেই না যে প্রতিদিনের ব্যবহৃত জিনিস যেমন একটি চিরুনি এদেশে তৈরি নাকি বিদেশে। সম্প্রতি, আমেরিকার সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত টানাপোড়েন এবং এইচ-১বি ভিসা ফি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই জানিই না যে আমাদের পকেটে রাখা চিরুনিটিও দেশে তৈরি নাকি বিদেশে। আমাদের উচিত স্বদেশি পণ্য কেনা। যা আমাদের দেশের যুবসমাজের পরিশ্রমে তৈরি’।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদনে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) ফি ধার্য করেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মোদির স্বদেশি আহ্বান সামনে এল, যা দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিও উস্কে দেন। তিনি বলেন, ‘স্বদেশি মন্ত্র আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে শক্তি জুগিয়েছিল; আজ একই মন্ত্র আমাদের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ এছাড়া সমস্ত রাজ্য সরকারকেও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং স্বদেশি অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান মোদি।
তিনি বলেন, ‘আমি সব রাজ্য সরকারকে আহ্বান জানাই এই অভিযানে যোগ দিতে এবং নিজেদের রাজ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে। যখন জাতি ও রাজ্য একসঙ্গে কাজ করবে, তখনই ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ স্বপ্ন পূর্ণ হবে।’ রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি একসঙ্গে দুটি উৎসবের সূচনার ঘোষণা করেন—শক্তির আরাধনার উৎসব নবরাত্রি এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় জিএসটি সেভিংস ফেস্টিভ্যাল। সোমবার থেকেই শুরু হতে চলেছে বহু প্রতীক্ষিত জিএসটি ২.০ সংস্কার, যা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজ—সবার জন্যই নতুন সুযোগ ও সঞ্চয়ের দ্বার খুলে দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতেই দেশবাসীকে নবরাত্রির শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে শক্তির আরাধনার উৎসব নবরাত্রি শুরু হচ্ছে। আপনাদের সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। নবরাত্রির প্রথম দিনেই দেশ আত্মনির্ভর ভারতের পথে এক বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে আগামীকাল থেকে নতুন প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার কার্যকর হতে যাচ্ছে। তিনি একে ‘জিএসটি সেভিংস ফেস্টিভ্যাল’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর কথায়, ‘আপনার সঞ্চয় বাড়বে এবং আপনার পছন্দের জিনিস কেনা আরও সহজ হয়ে উঠবে। দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত, যুবসমাজ, মহিলারা এবং ব্যবসায়ীরা—সবাই এর সুফল ভোগ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য—অর্থনীতিকে আরও স্বচ্ছ, সহজ এবং গণমুখী করে তোলা। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের কোটি কোটি মানুষকে অভিনন্দন জানাই। এই সংস্কার আমাদের বৃদ্ধির গল্পকে ত্বরান্বিত করবে, ব্যবসা করার সহজতাকে বাড়াবে, অধিক বিনিয়োগ টানবে এবং প্রতিটি রাজ্যকে জাতীয় উন্নয়নের সমান অংশীদার করবে।’ জিএসটি ২.০–এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার উপর করের বোঝা হ্রাস করা, যাতে সাধারণ ভোক্তারা সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে পারেন। একইসাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ব্যবস্থা তৈরি হবে যাতে তারা কম ঝামেলায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।