উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় নজির বারাকপুরের স্কুলশিক্ষকের, সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় দেশে দ্বিতীয় নীলাঙ্কুশ!
প্রতিদিন | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সন্দীপ চক্রবর্তী: আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশ্বের সেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয়, বিশ্বে ৩৫তম খড়দহের ভূমিপুত্র ড. নীলাঙ্কুশ আচার্য। স্ট্যানফোর্ড ২০২০ সাল থেকেই নিয়ম করে এমন তালিকা তৈরি করছে। আর বিজ্ঞানীমহলে আগ্রহের কেন্দ্রে তা। যেখানে বিভিন্ন নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরা বা নামজাদা অধ্যাপকেরা জায়গা করে নেন, সেখানে নীলাঙ্কশ ব্যতিক্রম। বাংলার মফস্বলের স্কুলশিক্ষক হয়েও প্রতিভা আর মনের জোরে সেরাদের তালিকায় তিনি।
তাঁর গবেষণার বিষয়টাও আলাদা। গবেষণার পরিকাঠামো, বই, সফটওয়ার অন্যরা যা পান সেগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েও, সারা বিশ্বের উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় আবারও শিখর ছুঁলেন এই বঙ্গসন্তান। তাই স্বাধীন গবেষক হিসাবে একমাত্র জায়গা পেয়েছেন তিনি। অনুমোদন না পেয়েও লড়াই চালিয়েছেন উচ্চ-অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের যুক্তদের সঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনারই বারাকপুরের উমাশশী হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক হয়েও নীলাঙ্কুশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ন্যানোফ্লুইড। এটি এমন এক তরল যাতে ১০০ ন্যানোমিটারেরও কম আকৃতির কঠিন কণা থাকে। বিশেষ ধরনের মডার্ন ফ্লুইড যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক প্রয়োগ আছে। সেই প্রয়োগ ও প্রবাহ নিয়েই গবেষণা। গত বছরই ইউরোপের পদার্থবিদ্যার একটি নামী জার্নাল ইপিজেপি তাঁকে বিশ্বের অন্য ৫০ জনের পাশাপাশি Distinguished Referee সম্মান দেয়।
গত বছর গোটা বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় ৪০ নম্বর স্থানে ছিলেন কল্যাণনগরের অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের সন্তান নীলাঙ্কুশ। স্কুলে বরাবর ভালো ফল করেছেন। কৃষ্ণনগর দেবনাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কবি বিজয়লাল হাই স্কুল ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক ও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্স অর্থাৎ ফলিত গণিতে এমএসসি, পরে যাদবপুর থেকে পিএইচডি। মা-ই ছিলেন পড়াশোনার মূল কান্ডারি। উনি ২০২০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে তার আগে ২০১১ সালে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছেন নীলাঙ্কুশ। এখন তাঁর ৩৫ বছর। আন্তর্জাতিক রিসার্চ পেপার প্রকাশ পেয়েছে ৬০টি আর বুক চ্যাপ্টার তিনটি।
স্ট্যানফোর্ডের এই তালিকা হল একটি উদীয়মান র্যাঙ্কিং যা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের চিহ্নিত করে। এটি বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তিগত, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা এবং সমস্ত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের উদ্ধৃতির মাধ্যমে গবেষণাপত্র এবং তাদের ফলাফলগুলি কীভাবে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলিকে প্রভাবিত করে তার বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। র্যাঙ্কিংটি সেই সব বিজ্ঞানীকে তালিকায় রাখে যাঁরা মর্যাদাপূর্ণ জার্নালে একাধিক উচ্চমানের পেপার প্রকাশ করেছেন। ২০১৯ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেপিএ লোন্নিডিস নামে একজন প্রফেসর এমন উদ্যোগ নেন। তার পর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এই তালিকা। ২০২০ সালে নীলাঙ্কুশের র্যাঙ্ক ছিল ২৪৪৩, ২০২১ সালে ৪৮৫ এবং পরের দুই বছর ২১৪ ও ৭৪। ক্রমে কমেছে যাত্রাপথ।