স্বামী, সন্তান সব হারিয়েছেন। কিন্তু চরম একাকীত্বেও মাতৃত্বকেই সঙ্গী করেন। ৪৬ বছর বয়সে আইভিএফের মাধ্যমে দ্বিতীয় বারের জন্য মা হন। সমাজের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে ছেলেকে স্কুটিতে চাপিয়ে ভবিষ্যতের পথে ছুটছেন বর্ধমানের ইন্দ্রকাননের পাপিয়া সেন। পাপিয়ার কথায়, ‘‘অনেকে অনেক রকম কথা বলবে। আমার জীবন। কী ভাবে ভাল থাকব, তা আমাকেই ঠিক করতে হব। যাঁরা পাশে থাকেননি, তাঁদের কথায় কেন কান দেব?’’
১৯৯৪ সালে রায়নার সেহেরায় থাকার সময় ১৮ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় পাপিয়ার। বালুরঘাট কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন তাঁর স্বামী হরভূষণ সেন। ২০১০ সালের জুন মাসে বর্ধমান থেকে ট্রেনে বালুরঘাট যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। দু’বছরের মাথায় অসুস্থ হয়ে মারা যায় তাঁদের কিশোরী কন্যা সমন্বিতা। স্বামী-মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন পাপিয়া। তাঁর কথায়, “সেই সময় খালি মনে হত, বেঁচে থেকে কী হবে! তিন-চার বার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলাম।” েয়ের পাশে থাকার জন্য সেহেরা থেকে চলে আসেন পাপিয়ার বাবা তপনকুমার দাঁ ও মা ছায়া দাঁ। বর্ধমানের সাধনপুরে একটি পলিটেকনিক কলেজে প্রজেক্টের কাজে যোগ দেন পাপিয়া। এমবিএ করেন। পাঁচ বছর পরে প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সাল থেকে তাঁকে ফের একাকীত্ব গ্রাস করে।
পাপিয়ার কথায়, “অনেকেই ফের বিয়ে করার কথা বলেন। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল না। প্রতি রাতেই মেয়েকে স্বপ্নে দেখতাম। ‘মা’ ডাকটা শোনার ইচ্ছে প্রবল হতে শুরু করে। একা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। বাবা, মা, দিদি, জামাইবাবুকে পাশে পেয়েছি।’’
প্রথমে দত্তক নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন পাপিয়া। কিন্তু পদ্ধতিতে আটকায়। ইন্টারনেট থেকে আইভিএফ-এর ব্যাপারে জেনে ফর্ম পূরণ করেন। বেশ কিছুটা পথ হেঁটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হয় পাপিয়ার গর্ভে। ২৭ অক্টোবর কোলে আসে ছেলে। পাপিয়া বলেন, ‘‘প্রথম সন্তানের সময় এতটাই ছোট ছিলাম যে মা হওয়ার অনুভূতিটাই ঠিক মতো বুঝিনি। দ্বিতীয় বারে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি।’’ তবে স্বামীহারা মাঝবয়সী মহিলার মা হওয়ার পদক্ষেপ মেনে নিতে পারেনি সমাজ। পরিজন থেকে পরিচিতদের নানা কটূক্তি শুনতে হয়েছে। কিন্তু তিনি দমেননি। তাঁর কথায়, “ছেলেকে মানুষ করতে পারলেই সব কথার উত্তর দেওয়া হবে।” ছোট বয়স থেকেই ছেলেকে ‘সিঙ্গল মাদার’ সম্পর্কে বোঝাতে চান পাপিয়া। তিনি মনে করেন, ছোট থেকে সত্যিটা ঠিকঠাক বুঝলে মনে প্রশ্ন বা সংশয় থাকবে না। পাপিয়ার বাবা-মা বলেন, ‘‘মেয়েটার খুব মনের জোর। ও ঠিক পারবে।’’