আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলিকে রক্ষা করার জন্য মোদি সরকার একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক ‘প্রায় সংঘর্ষ’ বা near-miss ঘটনায় নিরাপত্তা হুমকি আরও স্পষ্ট হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনায় রয়েছে বিশেষ ‘বডিগার্ড স্যাটেলাইট’ তৈরি, যা শত্রু রাষ্ট্রের কৌশলগত মহাকাশ কার্যকলাপ চিহ্নিত ও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের একটি মহাকাশযান ও প্রতিবেশী দেশের একটি স্যাটেলাইট প্রায় ১ কিলোমিটারের মধ্যেই চলে আসে। এটি ছিল ৫০০–৬০০ কিলোমিটার উচ্চতায় — যেখানে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক নেটওয়ার্কসহ বহু যোগাযোগ স্যাটেলাইট ভিড় করছে। সূত্রের দাবি, ভারতের স্যাটেলাইটটি সামরিক উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল, যেমন ভূমি পর্যবেক্ষণ ও মানচিত্র তৈরি। প্রতিবেশী দেশের স্যাটেলাইটের এত কাছাকাছি চলে আসা কেবল কাকতালীয় নয়, বরং ক্ষমতা প্রদর্শনের ইঙ্গিত হতে পারে। যদিও সংঘর্ষ ঘটেনি, ঘটনাটি “চোখ রাঙানি” হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মোদি সরকারের এই সুরক্ষা পরিকল্পনা একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন রুপির প্রকল্প। এর আওতায় আগামী বছরে প্রথম লঞ্চের মাধ্যমে প্রায় ৫০টি নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের তুলনায় মহাকাশে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তানের স্যাটেলাইট সংখ্যা যেখানে মাত্র ৮, ভারতের রয়েছে ১০০-এরও বেশি। তবে চীনের তুলনায় ভারত পিছিয়ে, কারণ বর্তমানে বেইজিং-এর কক্ষপথে ৯৩০-রও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি (PLA)-র মহাকাশ সক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে বলে ভারত ও মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন, যা দুই দেশের সীমান্ত বিরোধকে নতুন মাত্রা দেয়। সম্প্রতি এয়ার মার্শাল অশুতোষ দীক্ষিতও বলেন, চীনের স্যাটেলাইট কর্মসূচি ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে।
সরকার ইতিমধ্যেই বেসরকারি স্টার্টআপদের সঙ্গে মিলে Light Detection and Ranging (LiDAR) স্যাটেলাইট তৈরির পথ খুঁজছে। এগুলি সম্ভাব্য হুমকি দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এবং টার্গেটেড স্যাটেলাইটকে পুনঃস্থাপনের নির্দেশ পাঠানোর সময় দেবে। পাশাপাশি প্রয়োজন হবে স্থলভিত্তিক রাডার ও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক। আইএসআরও-র প্রাক্তন কর্মকর্তা সুধীর কুমার এন বলেন, “আমাদের এখনও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ইন-অরবিট ট্র্যাকিং সক্ষমতা নেই, তবে কিছু স্টার্টআপ এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।”
২০২৪ সালের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় আইএসআরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তখন প্রায় ৪০০ বিজ্ঞানী দিনরাত কাজ করে যোগাযোগ ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের সহায়তা করেন। আইএসআরও প্রধান ভি নারায়ণন সম্প্রতি এক ভাষণে বলেন, ঐ সংঘাতকালে চীন পাকিস্তানকে স্যাটেলাইট কাভারেজে সহায়তা করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকারের ‘বডিগার্ড স্যাটেলাইট’ প্রকল্প কেবল প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগতও। দ্রুত ভিড় বাড়তে থাকা কক্ষপথে ভারতের জন্য এটি মহাকাশে টিকে থাকার লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়।