গুজরাট বিমান দুর্ঘটনায় চালকের ভুলকে দায়ী করার প্রবণতাকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট
আজকাল | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়া এআই ১৭১ বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ‘পাইলট এরর’ বা চালকের ভুলকে দায়ী করার প্রবণতাকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে আখ্যায়িত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আদালত কেন্দ্র, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) এবং এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)-র কাছ থেকে জবাব তলব করেছে।
গত জুলাই মাসে এএআইবি একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নানা অনুমান উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের উল্লেখ ছিল, যেখানে ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দারের কথোপকথন শোনা যায়। এক পাইলট প্রশ্ন করেন, “Why did you cut off?” এবং অন্যজন জবাব দেন, “I didn’t.”—যা থেকে অনেকে অনুমান করেন যে পাইলটদের ত্রুটিই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে এই ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনকারী পক্ষ।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ যুক্তি দেন, তদন্ত কমিটিতে পাঁচ জন সদস্যের মধ্যে তিন জনই ডিজিসিএ-র কর্মকর্তা। যেহেতু এই সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, তাই তদন্তে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ভূষণ আরও অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমে বাছাই করা তথ্য ফাঁস করে পাইলটদের বিরুদ্ধে আগেভাগে দোষারোপ করা হয়েছে, যা জনমতকে বিভ্রান্ত করছে।
বিচারপতি সুর্যকান্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, গণমাধ্যমে এমন ‘অকাল ব্যাখ্যা’ অত্যন্ত “দুর্ভাগ্যজনক” এবং সতর্কভাবে গোপনীয়তা বজায় রেখে তদন্ত চালানো উচিত। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) প্রকাশের আবেদনও আদালত নাকচ করেছে। বিচারপতির মন্তব্য, “এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।”
‘সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষ থেকে দায়ের হওয়া এই জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের (সিভিআর) তথ্য গোপন করা হলে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়। আবেদনকারীরা যুক্তি দেন, আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)-র শিকাগো কনভেনশনের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীন ও প্রতিরোধমূলক তদন্ত বাধ্যতামূলক, যা দোষারোপের জন্য নয় বরং ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা রোধের জন্য।
পিআইএলের মূল দাবিগুলি হলো—
দুর্ঘটনা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা
সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্তকারী নিয়োগ
একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত তদন্তের নিশ্চয়তা
আবেদনকারীরা আরও দাবি করেন, শুধুমাত্র পাইলটকে দোষারোপ করা হলে তা নাগরিকদের জীবন ও নিরাপত্তার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১)-এর লঙ্ঘন হবে। এদিকে আরেকটি পৃথক জনস্বার্থ মামলায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং চলাচল স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা অডিট সম্পন্ন হচ্ছে। একইসঙ্গে দুজন চিকিৎসক ভারতের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এর আগে গত আগস্ট মাসে একই বেঞ্চ একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করেছিল, যেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা পরীক্ষা নিয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। তবে এবার আদালত একটি সীমিত প্রার্থনা গ্রহণ করে নোটিশ জারি করেছে, যাতে বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে একটি মুক্ত, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন তদন্তের পথ খুলে যায়। দুর্ঘটনায় ২৫০ জনেরও বেশি প্রাণহানি ঘটায় দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের আবহ তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপে ভুক্তভোগী পরিবারগুলির আশা বেড়েছে যে তদন্ত প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পথে এগোবে।