• 'একদিন পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিজেই বলবে, আমি ভারত', রাজনাথের মন্তব্যে কীসের ইঙ্গিত?...
    আজকাল | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাঁর সাফ বক্তব্য, কোনও আক্রমণ বা শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই একসময় পাক অধিকৃত কাশ্মীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। সোমবার মরক্কোয় ভারতীয় প্রবাসীদের উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, "পিওকে আমাদের হবেই। ইতিমধ্যেই সেখানকার মানুষ স্বাধীনতার দাবি তুলতে শুরু করেছেন। স্লোগানও উঠছে। পাঁচ বছর আগেই কাশ্মীরে সেনা-সমাবেশে আমি বলেছিলাম, আক্রমণ করে দখল করার প্রয়োজন হবে না। একদিন পিওকে নিজেই বলবে, ‘ম্যাঁ ভি ভারত হুঁ (আমরাও ভারতীয়)’। সেই দিন আসবেই।"

    অপারেশন সিঁদুরের পর থেকেই বিরোধী শিবিরের একাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে ৭ মে- চাইলেই পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারত ভারত। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ওই অভিযানে একাধিক পাক যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার পর ভারতীয় বাহিনী বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল বলেই দাবি। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে, এমন পরিস্থিতিতে কেন যুদ্ধবিরতি মানা হল?

    রাজনাথ সিং বর্তমানে দু'দিনের মরক্কো সফরে রয়েছেন। সেখানে তিনি উদ্বোধন করবেন টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসের নতুন কারখানা, যেখানে তৈরি হবে হুইলড আর্মার্ড প্ল্যাটফর্ম ৮x৮। আফ্রিকা মহাদেশে এটিই হবে প্রথম ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্র। এটাই প্রথমবার কোনও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মরক্কো সফরে গিয়েছেন।

    এই সফরে মরক্কোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেলতিফ লুদিই-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন রাজনাথ সিং। ভারত ও মরক্কোর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথাও রয়েছে। প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ, শিল্পযোগ এবং নৌসেনা-সংযোগ আরও মজবুত করাই এই চুক্তির লক্ষ্য। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত কয়েক বছরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ নিয়মিতই কাসাব্লাঙ্কা বন্দরে নোঙর ফেলেছে।

    পাক অধিকৃত কাশ্মীরকাশ্মীরের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেদের স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন কাশ্মীরের রাজা হরি সিং। দূর্বল রাজার থেকে এই অঞ্চল ছিনিয়ে নিতে সেনা অভিযান শুরু করে পাকিস্তান। এই অবস্থায় কাশ্মীরকে বাঁচাতে ভারতের সাহায্য চান রাজা। হরি সিংয়ের সঙ্গে ভারতের সেই চুক্তির বলেই জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়। যদিও তার আগেই কাশ্মীরের অনেকটা অংশ অবৈধভাবে দখল করেছে পাকিস্তান। সেই সময় থেকে কাশ্মীরের ১৩,২৯৭ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পাকিস্তানের অধীনে। এই অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে গিলগিট, বালটিস্তান, মিরপুর, মুজফফরাবাদের মতো অঞ্চলগুলি। সৌন্দর্যের দিক থেকে এই সব অঞ্চল চোখ ধাঁধিয়ে দিলেও পাকিস্তানের দৌলতে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে এইসব জায়গা। যা ভারতের জন্য বিশেষ মাথাব্যথা।

    কূটনৈতিক দিক থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গুরুত্বশুধু সৌন্দর্য নয়, কূটনৈতিক, সামরিক, আর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের দখলে থাকা এই অঞ্চল। অধিকৃত কাশ্মীর পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে সীমান্তের ভাগ করে। এর একটা অংশ চিনকে লিজে দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। সেখান থেকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসি তৈরি করছে চিন। সিন্ধু নদের একটা বড় অংশ এই অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের জন্য পানীয় ও চাষের জলের অন্যতম উৎস এই নদ। এই অঞ্চল ভারতের অধীনে চলে এলে বিরাট ধাক্কা খাবে চিনের সিপিইসি। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের আর সরাসরি সীমান্ত যোগ থাকবে না। আর্থিকভাবে কার্যত অন্ধ হয়ে যাবে শত্রু দেশ।
  • Link to this news (আজকাল)