আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৫ আগস্ট ঘোষণা করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, সহজ হবে দেশের কর ব্যবস্থা। তার এক মাসের মাথায় জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক হয়ে যায়, চার স্তরের বদলে এবার থেকে দুই স্তরের কর কাঠামো ধার্য হবে দেশে। ২২ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ আজ থেকেই ধার্য হবে নয়া কর কাঠামো। গত আট বছর ধরে প্রচলিত ১২ এবং ২৮ শতাংশের জিএসটি করের দু'টি স্তর বাতিল করা হয়েছে। বেশিরভাগ পণ্যের উপরই পাঁচ ও ১৮ শতাংশ জিএসটি কার্যকর হয়েছে। ফলে উৎসবের মরসুমের শুরুতেই কিছুটা স্বস্তি দেশবাসীর। জিএসটি কমায় নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম কমছে। জিএসটি কর-হার সরলীকরণকে ১৫ অগাস্টের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী 'দিপাবলীর উপহার' বলে অভিহিত করেছিলেন। রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদি এই কর-ছাড়ার পদক্ষেপকে 'দ্বিগুণ দীপাবলি' হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই নয়া কর কাঠামোয় দাম কমছে বহু দ্রব্যের। তার মধ্যে তালিকায় যেমন দুধ-ঘি, আইসক্রিম তেমনই এসি মেশিনও।
কোন কোন দ্রব্যের দাম কমছে-
শুরুতেই উল্লেখ করা যাক-
জীবন বিমা পলিসির উপর জিএসটি অব্যাহতি: সমস্ত ব্যক্তিগত জীবন বিমা পলিসি এখন জিএসটির আওতাবিহীন। এর মধ্যে রয়েছে মেয়াদী বিমা পরিকল্পনা, এনডাউমেন্ট পলিসি এবং ইউনিট-লিঙ্কড বিমা পরিকল্পনা (ULIP)। ব্যক্তিগত জীবন বিমা পলিসিগুলির পুনর্বিমাও অব্যাহতির আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বীমার উপর জিএসটি অব্যাহতি: পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রবীণ নাগরিক-নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পলিসি-সহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিমা পলিসিগুলিও এখন জিএসটি-র করসীমার বাইরে।
নিত্যপ্রয়োজনীয়- রুটি, পরোটা, পনির, পিৎজা রুটি, খাকড়াতে কোনও জিএসটি লাগবে না। এর আগে এইসব দ্রব্যের উপর পাঁচ শতাংশ জিএসটি স্ল্যাব প্রযোজ্য ছিল।
একইসঙ্গে জানা গিয়েছে, মাখন, ঘি, পনির, জ্যাম, সস, স্যুপ, পাস্তা, নোনতা এবং মিষ্টান্নর উপর এবার থেকে লাগু হবে ৫ শতাংশ কর স্ল্যাব, যা ১২-১৮% থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। বাদাম, পেস্তা এবং কাজু বাদামের মতো শুকনো ফল, খেজুর এবং সাইট্রাস ফলের উপরও ধার্য হবে পাঁচ শতাংশের কর-হার। জেলি, মাশুরুম, ভুজিয়া, নারকেলের জল-এসবের উপর থেকে জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে নেমে হচ্ছে পাঁচ শতাংশ।
সৌন্দর্য ও ফিটনেস পরিষেবা-সেলুন, স্পা, জিম, স্বাস্থ্য ক্লাব, যোগব্যায়াম সংক্রান্ত দ্রব্যের উপর ধার্য হবে ৫ শতাংশ।
গৃহস্থালী ও ব্যক্তিগত যত্ন- টুথ পাউডার, শ্যাম্পু, ট্যালকম পাউডার, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, সাবান, চুলের তেল, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, টেবিলওয়্যার, বাসনপত্র, ছাতা, সাইকেল, বাঁশের আসবাবপত্র- এইসব দ্রব্যের উপর ধার্য হচ্ছে ৫ শতাংশ।
পড়াশোনা- নোটবুক, পেন্সিল, শার্পনার এবং ইরেজারের মতো স্টেশনারি জিনিসপত্রের দামও কম হবে। নোটবুক, পেন্সিল শার্পনার, গ্লোব, ম্যাপ চার্ট, খাতা, ইরেজার করমুক্ত। পাশাপাশি খেলনা, ক্রীড়া সামগ্রী, হস্তশিল্প এবং বাঁশ বা বেত দিয়ে তৈরি আসবাবপত্রও সস্তা হবে।
স্বাস্থ্যগত- থার্মোমিটারের, সমস্ত ডায়গোনেস্টিক কিট, গ্লুকোমিটার, টেস্ট স্ট্রিপের উপর থেকে জিএসটি ১২ থেকে নেমে ধার্য হবে ৫ শতাংশ জিএসটি স্ল্যাব। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেমন অ্যাগালসিডেস বিটা, ওনাসেমনোজিন, ডারাটুমুমাব এবং অ্যালেক্টিনিব এখন করমুক্ত।
পরিবহন এবং আবাসন- সিমেন্টে এবার থেকে ২৮% থেকে নেমে ১৮%-এর স্ল্যাবে। ট্রাক্টর, সাইকেল, ৩৫০ সিসির কম মোটরসাইকেল, ছোট গাড়ি (পেট্রোল/ডিজেল <১২০০-১৫০০ সিসির, দৈর্ঘ্য <৪ মিটার), বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্সের উপর কর হ্রাস করা হবে। মার্বেল, গ্রানাইট ব্লক এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি পার্টিকেল বোর্ডের মতো পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর উপরও মাত্র ৫% কর প্রযোজ্য হবে।
এয়ার কন্ডিশনার, টিভি (এলইডি, এলসিডি), ডিশ ওয়াশিং মেশিন এর উপর ২৮ শতাংশের বদলে প্রযোজ্য হবে ১৮ শতাংশের জিএসটি স্ল্যাব।
লিজিং এবং ভাড়া দেওয়ার উপর জিএসটি: অপারেটর ছাড়া পণ্য লিজিং বা ভাড়া দেওয়ার উপর পণ্যের মতোই একই হারে কর আরোপ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও গাড়ি বিক্রির উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য হয়, তাহলে চালক ছাড়া সেই গাড়ি ভাড়া করার ক্ষেত্রেও ১৮ শতাংশ কর দিতে হবে। একই নীতি অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বিড়ির দাম কমছে: বিড়ির দামও কমছে। বিড়ির পাতার উপর ১৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমে হচ্ছে ৫ শতাংশ হয়েছে।
৮ থেকে ১৮ শতাং জিএসটি হওয়ায় টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটরের দাম কমছে। ছোট গাড়ি (১২০০ সিসি-র নীচে পেট্রল, ১৫০০ সিসি পর্যন্ত ডিজ়েল এবং এলপিজি বা সিএনজি), ৩৫০ সিসি-র নীচে বাইকের দাম কমছে। জুতো এবং জামাকাপড়ের উপর ৫ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য।