• আনন্দপুর কাণ্ডে গ্রেপ্তার কুখ্যাত আসামি ‘মিনি ফিরোজ’
    আজকাল | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • গোপাল সাহা: দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল কুখ্যাত আসামি মোঃ ফেরোজ খান ওরফে ‘মিনি ফিরোজ’। আনন্দপুর কাণ্ডে সরাসরি জড়িত এই আসামিকে রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় নয়া দিল্লির আজমেরি গেট এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেরোজ খান (৩৭), পিতা মৃত ফিদা হুসেন, কলকাতার পশ্চিম চৌভাগা, গুলশান কলোনি এলাকার বাসিন্দা। এজাহারভুক্ত এই আসামিকে কলকাতা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল।

    পুলিশ সূত্রে খবর, আনন্দপুর কাণ্ডের পর থেকেই ফেরোজ গা-ঢাকা দেয়। অভিযোগ, স্থানীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি এবং একাধিক ফৌজদারি মামলার সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। আনন্দপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ফেরোজ ছিল অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। ঘটনার পর থেকে সে বারবার আস্তানা বদল করে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

    গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম দিল্লি পুলিশের সহায়তায় রবিবার বিকেলে অভিযান চালায়। আজমেরি গেট রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে ফেরোজকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখন সে ভুয়ো পরিচয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করছিল। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের নাম গোপন রাখলেও পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত করে। অবশেষে গ্রেপ্তার হয় ফেরোজ।

    কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকালে ফেরোজকে কলকাতায় আনা হবে এবং মাননীয় আদালতে সশরীরে পেশ করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেরোজকে জেরা করে আনন্দপুর কাণ্ডের মূলচক্রীদের নাম বের করার চেষ্টা হবে। ইতিমধ্যেই তদন্তে উঠে এসেছে, ফেরোজের সঙ্গে অপরাধ জগতের একাধিক চক্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং স্থানীয় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, গুলশান কলোনি এলাকায় ফেরোজ বহুদিন ধরেই আতঙ্কের আরেক নাম ছিল। তার দাপটে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। পুলিশি তৎপরতায় ফেরোজ ধরা পড়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ফেরোজকে জেরা করলে আনন্দপুর কাণ্ডের আর্থিক যোগসূত্র এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। আগামী দিনে আরও গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ। আনন্দপুর কাণ্ডে গ্রেপ্তার এই আসামি ধরা পড়ায় পুলিশের একাংশ মনে করছে, মামলার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে এবং মূলচক্রীদের গ্রেপ্তার করাও এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

    প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের পরিবেশ তৈরি হয়। গুলি চলার অভিযোগও ওঠে। ওই ঘটনায় আগে চারজন গ্রেপ্তার হলেও, মূল অভিযুক্ত মিনি ফিরোজ অধরা থেকে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছিল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। দুর্গাপুজোর মণ্ডপ পরিদর্শনে বেরিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, “ক্রিমিনাল যত বড়ই হোক, গ্রেপ্তার হবেই।” তাঁর সেই আশ্বাসের দু’দিনের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল মিনি ফিরোজ।
  • Link to this news (আজকাল)