সৌদির সঙ্গে পাকিস্তানের এই নতুন চুক্তি উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের রেষারেষি আরও বাড়িয়ে তুলবে ...
আজকাল | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আর কে দাশ (প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্তা)
গত ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ও সৌদি আরব যে স্ট্র্যাটেজিক মিউচ্যুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট (এসএমডিএ) সাক্ষর করেছে তা নিঃসন্দেহে একদিকে যেমন আঞ্চলিক রেষারেষি বাড়াবে তেমনি ভারতকেও সৌদির সম্পর্কে নতুন করে ভাবাবে। কারণ এই চুক্তিতে বলা হয়েছে দুই দেশের যে কোনও একটি দেশের উপর আক্রমণকে অন্য দেশ তাদের উপর আক্রমণ হয়েছে বলে মনে করবে। যেটা ন্যাটো সদস্য দেশগুলি মনে করে। এর ফলে একজনের সাহায্য নিয়ে আরেকজন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এক কথায় বলতে গেলে ইসলামাবাদ এবং রিয়াধ দু'দেশই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র তৈরি করবে। খেয়াল রাখতে হবে ইরানের উপর ইজরায়েলের আক্রমণ এবং মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকার নিরাপত্তা প্রদান সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠার পরেই কিন্তু এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এই চুক্তি সম্পর্কে খুব 'মাপা' প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে বিষয়টি তাদের নজরে আছে। বিশেষজ্ঞদের চোখে এই ধরনের চুক্তির পিছনে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানের চেষ্টার দিকটি নজরে এসেছে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, যদি ভবিষ্যতে আবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় সেক্ষেত্রে সৌদি আদৌ তাদের সেনা পাঠিয়ে বা প্রত্যক্ষভাবে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও 'মিলিটারি সাপোর্ট' পাঠাবে কিনা। খেয়াল রাখতে হবে ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে কিন্তু অর্থনৈতিক, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। যদি বিরাট কিছু পরিবর্তন না হয় তবে এই দুই দেশ কিন্তু কখনই একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলবে না।
পাকিস্তান এই নিয়ে যতই লাফালাফি করুক না কেন সৌদির তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দু'দেশের মধ্যে এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি কিন্তু কখনও এটা ভারত বিরোধী কোনো পদক্ষেপ নয়। যদিও এটা এমন একটা সময় হয়েছে যখন সদ্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত ঘটে গিয়েছে এবং সৌদি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই চুক্তির ক্ষেত্রে কিন্তু কোথাও ভারতের নাম বা অন্য কোনো দেশের নাম করা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন এটা যতটা না ভারতের বিপক্ষে যাবে তার থেকে অনেক বেশি হল ইজরায়েলকে একটা বার্তা দেওয়া হবে।
আপাত দৃষ্টিতে এই ধরনের চুক্তির স্বল্পমেয়াদি দিক হল যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদান। কিন্তু এর অর্থ কখনও ভারতের বিপক্ষে কোনো অক্ষ গড়ে তোলার প্রয়াস নয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে ভারতকে খেয়াল রাখতে হবে এই ধরনের আঞ্চলিক মেরুকরণের উপর। সেখানে পাকিস্তান ও সৌদি আরব এই বিষয়টি নিয়ে কতদূর অগ্রসর হয় সেটাও খেয়াল রাখার মতো বিষয়। কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে ভারত ও সৌদির মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কিন্তু যথেষ্ট মজবুত।
ভারত এবিষয়ে অত্যন্ত মাপা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে যেমন খুব সতর্ক হয়ে এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করছে তেমনি সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করছে।