কলকাতার বায়ুর মানোন্নয়নে একযোগে পদক্ষেপ পুলিশ, পুরসভা এবং রাজ্য সরকারের
আনন্দবাজার | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘স্বচ্ছ বায়ু সার্ভে ২০২৫’ এবং ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামে’র পর (এনসিএপি) র্যাঙ্কিং সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে সেই তালিকায় শহর কলকাতার ৩৮ নম্বরে। আর মধ্যপ্রদেশের শহর ইনদওর শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে। এমন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই কলকাতার পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কী ভাবে শহরের বায়ুকে তুলনামূলক ভাবে স্বচ্ছ করা যায়।
প্রশাসনের একটি অংশ জানাচ্ছে, কলকাতা পুরসভা ধারাবাহিক ভাবেই শহরের বায়ুর মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। তবে পরিবেশপ্রেমীদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগের মাত্রা সরকারের তরফে আরও বৃদ্ধি করা উচিত। গত কয়েক মাসে দক্ষিণবঙ্গের বায়ুর স্বচ্ছতা ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ ১.১ কোটি টাকা খরচ করে ৩০টি নতুন যানবাহন দূষণ পরিমাপ করার যন্ত্র কিনেছে। এই নতুন যন্ত্রগুলি শহরের যানবাহন দূষণ মনিটর করার ক্ষমতা আগের চেয়ে শতকরা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের।
একটি সমীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডকে একটি করে নতুন যন্ত্র দেওয়া হবে, কলকাতা পুলিশ এমন পরিকল্পনা করেছে। তা ছাড়া অ্যান্টি পলিউশন সেল এবং স্পেশ্যাল রেডস বিভাগে প্রায় সাতটি অতিরিক্ত যন্ত্র রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু শুধু যানবাহন মনিটর করাই নয়, শহরের বায়ুর মানোন্নয়নে কলকাতা পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার ভূমিকা আরও ব্যাপক হবে। এনসিএপির অধীনে শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বায়ুদূষণ বৃদ্ধির তিনটি মূল কারণ চিহ্নিত করা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের বাড়বাড়ন্ত ও ট্রাফিক জ্যাম, পুরাতন যানবাহন এখনও চলমান থাকা, এবং আবর্জনা পোড়ানো। এই বিষয়গুলি সবচেয়ে আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’ কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশ যৌথ ভাবে গার্ডেন রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (জিআরএপি) প্রণয়ন করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ প্রশাসনের তরফে দূষণকারী যানবাহন শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে । কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্জ্য নির্গতকারী যানবাহন শনাক্ত ও শাস্তি প্রদানে ব্যবহৃত পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল (পিইউসি)-র টেস্ট কিট প্রদান প্রক্রিয়া দ্বিগুণ করেছে ।
শীতকালের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পুরসভা মেগা স্প্রিংকলার এবং মিস্ট ক্যানন ব্যবহার করে নির্মাণক্ষেত্র ও রাস্তা থেকে ধুলা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্যই নয়া হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পরিবেশ দূষণের মোকাবিলায় রাজ্য পরিবেশ দফতর একটি টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে। টোল ফ্রি নম্বরটি হল, ১৮০০৩৪৫৩৩৯০। এই নম্বরে ফোন করলেই নাগরিকরা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন সংক্রান্ত যে কোনও ধরনের অভিযোগ জানাতে পারবেন। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা অধিবেশনে পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই হেল্পলাইন নম্বর চালুর কথা জানিয়েছেন।
আপাতত পরিবেশ দফতর, কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশ-প্রশাসন শহরের বায়ুর মান ঠিক করতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।