• রায়গঞ্জের মেহেন্দিগ্রামে দুর্গাপুজোয় পাঁচদিন নিরামিষ খান হিন্দু, মুসলিমরা
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুমন রায়, রায়গঞ্জ: চারিদিকে শস্য শ্যামলা ধানখেত। শরতে চারদিকে সবুজের সমারোহ। রায়গঞ্জের মেহেন্দিগ্রামে এমনই মনজুড়ানো প্রকৃতির  মাঝে বহু পুরনো মন্দিরে দুর্গার আরাধনায় ব্রতী হন এলাকার মানুষ। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে। বছরের পর বছর ধরে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে চলেছে রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মেহেন্দিগ্রাম সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এই মন্দিরে দেবী দুর্গার আরাধনায় হিন্দুরা যেমন অংশ নেন, তেমনি শামিল হন এলাকার মুসলিমরাও। শুধু চাঁদা দেওয়াই নয়, পুজো কমিটিতে থেকে চাঁদা তোলা সহ পুজোর সমস্ত কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন মেহেন্দিগ্রামের মহম্মদ সাফারুদ্দিনরা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও এখানকার দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য আকৃষ্ট করে সাফারুদ্দিনেরও। সেকারণে রায়গঞ্জ শহর থেকে দশ কিমি দূরে এই গ্রামের পুজোতেও মানুষের ঢল নামে। ষষ্ঠী থেকে দশমী,- পুজোর পাঁচটা দিন এলাকার হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিমও নিরামিষ খাবার খান। তাঁদের বাড়িতেও এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে আত্মীয় স্বজনেরা আসেন। পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন তাঁরাও। ছোটবেলা থেকে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রামেশ্বর রায়। তাঁর কথায়,  এই পুজো একসময় জমিদাররা করত। এখন আমরা সবাই মিলে করি। সত্তরোর্ধ্ব মহম্মদ সাফারুদ্দিন বলেন, আমরাও এই পুজোতে শামিল হই। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আয়োজন করি। রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন মেহেন্দিগ্রামের এই পুজোর সঙ্গে অবশ্য জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। তৎকালীন বাংলাদেশের হরিপুরের জমিদার দুর্লভ রায়চৌধুরী এই পুজো শুরু করেছিলেন। পুজোর  সময় হেঁটে হরিপুরে জমিদারের বাড়ি গিয়ে দেবীকে দর্শন করতেন এলাকার আপামর জনসাধারণ। পুজোর সামগ্রীও কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আনা হতো এই মেহেন্দিগ্রামে।  তারপর দেশভাগ, জমিদারি প্রথা লোপ, নানা ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কুলিক। পরে মেহেন্দিগ্রামের মানুষই দায়িত্ব নেন জমিদারবাড়ির এই পুজোর। সবাই মিলে চাঁদা তুলে আয়োজন হয় দুর্গার আরাধনা। সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে মেহেন্দিগ্রামের এই পুজো এখনও আলাদা নজর কাড়ে রায়গঞ্জবাসীর কাছে। মন্দিরের ঢাকি মানিক বৈশ্য বলেন, একসময় আমার বাবা এই মন্দিরে ঢাক বাজাত। এখন আমি বাজাই। গ্রামের বালিভাসা পুকুরে দেবীর নিরঞ্জন হয়।  মেহেন্দিগ্রামে দুর্গামণ্ডপ।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)