• কোচবিহারের বড়দেবী পূর্ণসাজে সেজে উঠছেন, আজ মাতৃ দর্শন
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: পূর্ণসাজে সেজে উঠছেন কোচবিহারের মহারাজাদের প্রতিষ্ঠা করা বড়দেবী। মায়ের সাজ সম্পূর্ণ করে আজ, মঙ্গলবার হবে দেবী দর্শন (দেও দেখা)। সকাল সাড়ে ১০টায় কোচবিহারের দেবীবাড়িতে বড়দেবীর মন্দিরে বিরাট কোষার জলে দেবী দর্শন করবেন জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা। তার আগে প্রায় ৬০ ভরি গয়নায় মাকে পূর্ণসাজে সজ্জিত করা হবে। কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের স্ট্রংরুম থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় বের করা হবে সেই স্বর্ণালঙ্কার। পুলিশি প্রহরাতেই সেসব নিয়ে আসা হবে বড়দেবীর মন্দিরে। এদিন থেকেই দেবীবাড়িতে পুলিশ মোতায়ন থাকবে। থাকছে সিসি ক্যামেরায় নজরদারি। 

    সোমবার দুপুরেও বড়দেবীর মূর্তি রং করার কাজ চলে। প্রতিমা শিল্পী প্রভাত চিত্রকর সহ তাঁর সহযোগীরা সেই কাজ করেন। দেবী এখানে রক্তবর্ণা। পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের বদলে আছেন জয়া ও বিজয়া। বাঘ ও সিংহ রয়েছে। দশভুজা দেবী অসুর বধ করছেন। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো বড়দেবীর এই পুজোর সঙ্গে কোচবিহার তো বটেই গোটা উত্তরবঙ্গ ও নিম্নঅসমের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের ভাবাবেগ জড়িত রয়েছে। 

    রাজ পুরোহিত ধীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার প্রতিপদে মায়ের রাংসাজ, বস্ত্র পরিধান সহ আনুসাঙ্গিক কাজ হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার দ্বিতীয়ার সকালে মা পূর্ণসাজে সেজে উঠবেন। এরপরেই দেবী দর্শন হবে। 

    মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, আজ মঙ্গলবার মদনমোহন মন্দিরের স্ট্রং রুম থেকে গয়না যাবে। সকালেই বড়দেবীকে স্বর্ণালঙ্কার পরানো হবে। এরপর দেবী দর্শন হবে। পুলিশের উপস্থিতিতে এসব দেবীবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএম দেবী দর্শন করবেন। 

    মদনমোহন মন্দিরে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের স্ট্রং রুমে সারা বছর অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে রাখা থাকে বড়দেবীর রাজ আমলের গয়না। এর মধ্যে রয়েছে সোনা ও রূপার ওরচাঁদ, ১০৯টি কাঠি ও একটি লকেট সম্বলিত সোনার কাঠি মালা, ৭৮টি সোনার কলি সম্বলিত সোনার চাপকলি হার ও সোনার পাথর সহ একটি নথ। এমনিতেই অন্যান্য দুর্গা মূর্তির সঙ্গে বড়দেবীর রূপের কোনও মিল নেই। মহারাজাদের চালু করা এই দেবীর চোখ, মুখ সবই আলাদা। অন্যান্য দুর্গাপুজোর সঙ্গে বড়দেবীর পুজোর নিয়মকানুনেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। এখানে মোষ, পাঁঠা, পায়রা ইত্যাদি বলির রীতি রয়েছে। 

    বড়দেবীর পুজো আসলে দু’মাসের পুজো। ময়না কাঠ সংগ্রহ, তার পুজো, ময়না কাঠকে মদনমোহন মন্দির থেকে পালকিতে চাপিয়ে বড়দেবীর মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কাঠকে স্থাপন করে, হাওয়া খাইয়ে তার উপরে বিরাট আকারের বড়দেবীর প্রতিমা বানানো হয়। এর পাশাপাশি চার দফায় চলে বড়দেবীর গৃহারম্ভ পুজো। বড়দেবীর বর্তমান স্থায়ী মন্দিরটি স্থাপনের আগে প্রতিবছর বড়দেবীর গৃহ নির্মাণ করে তাতে পুজো হতো। সেই প্রথা আজও রয়েছে। 

    কথিত আছে, এই পুজোয় নরবলির প্রচলন ছিল। যাঁদের বলি দেওয়া হতো তাঁদের ‘ভোগ’ বলা হতো। সেই প্রথা বহুকাল আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বড়দেবীর পুজোয় এখন নররক্ত প্রদানের রীতি রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি পরিবারের সদস্যরা অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পুজোর সময় নিজের দেহ থেকে বড়দেবীকে রক্ত উৎসর্গ করেন। যা গভীর রাতে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় রক্ত প্রদানকারী ছাড়া অন্য কারও সেখানে প্রবেশাধিকার থাকে না। এছাড়াও চালিয়াবালিয়া পুজো, বিসর্জনের ভিন্নতা সহ একাধিক রীতি বড়দেবীর পুজোকে যুগ যুগ ধরে অনন্য করে রেখেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)