ঐতিহ্যবাহী ভাসাপুলের জন্মদিনে স্বল্পদৈর্ঘের ছবির প্রতিযোগিতা
বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: ১২১ বছর বাদে প্রথমবার ঘাটালের ঐতিহ্যবাহী ভাসাপুলকে নিয়ে উৎসবের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১৯০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ইংরেজরা ভাসাপুলটিকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়েছিল। সোমবার তাই এই পুলকে ফুল, মালায় সাজানো হয়। ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানান, ভাসাপুলের এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে টাউন হলে স্বল্পদৈর্ঘের একটি ছবির প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।ঘাটাল শহরের অন্যতম গর্ব এই ভাসাপুল। ২০০০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় আইনসভায় স্থানটি হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ভাসাপুল হল অনেকগুলি নৌকাকে একসঙ্গে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে পাটাতনের সাহায্যে ঘাটালের শীলাবতী নদীর পূর্বপাড় থেকে পশ্চিমে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা। ঘাটাল পুরসভা ভাসাপুলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে প্রায় ৪০ লক্ষের বেশি টাকা ব্যয় করে বলে চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা জানান। ইতিহাস বলে, এক সময় যখন বিদেশীরা ব্যবসার জন্য সারা বাংলা দাপিয়ে বেড়িয়েছে তখন বাদ যায়নি ঘাটালও। ব্রিটিশরা তো এখানে এসে ব্যবসা করেছে, তার আগে এসেছিল ওলন্দাজরা। এখনও ঘাটাল শহর ও তার আশপাশের এলাকায় সেসব নিদর্শন দেখা যায়। এমনকী, তাম্রলিপ্ত যখন এক সমুদ্র বন্দর ছিল, তখনও ঘাটালের কাছে অবস্থিত বন্দর নামক জায়গা বন্দর হিসাবেই কাজে লাগত। এক সময় ঘাটালের তসর, সিল্ক ও কাঁসা, পিতলের জিনিসের কদর ছিল দেশ জোড়া। এখানকার উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হতো। ব্যবসার কাজে এখানে ব্রিটিশদের আগে এসেছিল ওলন্দাজরা। এক সময় ঘাটাল মহকুমার নানা জায়গায় নীলকুঠি গড়ে ওঠে। সেগুলি মূলত ছিল ওলন্দাজদের। তারাই ঘাটাল শহরে বসবাসের জন্য শিলাবতী নদীর পূর্বপাড়ে একটি বাড়ি করেন, সেটিই বর্তমানে মহকুমা শাসকের অফিস।
১৭৭৪ সালে সেই বাড়িটি ওলন্দাজদের কাছ থেকে কিনে নেয় ইংরেজরা। ব্রিটিশরা এই ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে নীল ও রেশমের কারবার শুরু করে। তখন নদীপথেই চলত বাণিজ্য। ইংরেজরাও শিলাবতী নদীপথে স্টিমারে চেপে কলকাতায় যাতায়াত করতেন।
জানা যায়, শিলাবতীর পশ্চিম তিরে নীল ও রেশমের চাষ বেশি হতো। নদীর পূর্বপাড়ে ছিল ইংরেজদের বাংলো। নদীর ওপর সেই সময় কোনও সেতু না থাকায় তাঁরা নৌকায় করে এপার-ওপার যাতায়াত করতেন। জলে যাতায়াতের সমস্যা মেটাতে ১৮৫০ সালে জনৈক ওয়াটসন সাহেব এখানে নদীতে নৌকা দিয়ে পুনটুন সেতু তৈরি করেন। সেটিই বর্তমানে ঘাটাল ভাসাপুল নামে পরিচিত। যখন এই পুনটুন সেতু তৈরি হয় সেই সময় এর উপর দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল। তখন সাহেব এবং তাঁদের কর্মীরাই একমাত্র ভাসাপুলের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন। ভাসাপুলের দুই পাড়ে থাকত রক্ষী। তবে একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন। পরে অবশ্য বেঙ্গল ফেরিজ অ্যাক্ট ১৮৮৫ (৬) ধারা অনুসারে ১৯০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণের ব্যবহারের জন্য এই ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়। কাজেই ওই ২২ সেপ্টেম্বরকেই ভাসাপুলের জন্মদিন ধরা হয়।