পিছনে ধাক্কা কন্টেনারের, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, হুড়মুড়িয়ে ট্রাভেলার ঢুকল মেলায়, সম্পাদক সহ মৃত ২
বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বেপরোয়া কন্টেনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাতীয় সড়কের লেন বদল করে ধাক্কা মারল একটি ট্রাভেলার গাড়িকে। সেটি আবার সড়ক থেকে ছিটকে গিয়ে ঢুকে পড়ল মেলার ভিড়ে। চাপা পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারালেন মেলা কমিটির সম্পাদক সহ দু’জন। রবিবার রাত ১০টা ৪৫মিনিট নাগাদ পাঁশকুড়া থানার মেচগ্রামের মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ন’জন। মৃতদের নাম বিজয় বেরা (৫৯) ও রিয়া জানা (৩১)। বিজয়বাবুর বাড়ি দক্ষিণ মেচগ্রামে। তিনি মেচগ্রাম বিশ্বকর্মা পুজো কমিটির সম্পদক। রিয়াদেবীর বাড়ি হাওড়ার শ্যামপুরে। আহত অমিত মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী ঝুমা মণ্ডল কলকাতার একটি নামী বেসরকারি হাসাপাতলে ভর্তি। উভয়েই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এছাড়াও শ্রেয়া জানা, গোপাল সামন্ত ও রিঙ্কু জানাকে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত প্রায় ৫৬ বছর ধরে মেচগ্রামে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে জাতীয় সড়কের ধারে মেলা বসে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পুজোর দিন মেলা বসে। এক সপ্তাহ ধরে মেলা হওয়ার কথা। রবিবার সন্ধ্যায় ব্যাপক বৃষ্টির কারণে রাতের দিকে মেলা জমে ওঠে। মহালয়া এবং ছুটির দিন থাকায় লোকজনও প্রচুর এসেছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাত তখন পৌনে এগারোটা। মেলায় থিকথিকে ভিড়। আচমকা কলকাতা থেকে খড়্গপুরগামী একটি কন্টেনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেন বদল করে পুলিশের ব্যারিকেড দুমড়ে মুচড়ে কলকাতামুখী লেনে চলে আসে। ঠিক সেই মুহূর্তে ওই জায়গায় পর্যটকবাহী একটি ছোট গাড়ি কলকাতার দিকে যাচিছল। কন্টোনেরর ধাক্কায় ট্রাভেলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেলার ভিড়ের মধ্যে ছিটকে পড়ে। তার নীচে চাপা পড়ে যান অনেকেই। প্রবল চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। স্থানীয় সমাজশিক্ষা কেন্দ্রের সদস্য সহ অন্যান্যরা ছুটে আসেন। ট্রাভেলারটিকে সরিয়ে চাপা পড়ে যাওয়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। রক্তে ভেসে যায় দুর্ঘটনাস্থলটি। মেলার আনন্দ মুহূর্তে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আহতদের কেউ জল চাইছেন। কেউ আর্তনাদ করছেন। সবাইকে উদ্ধার করে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিজয়বাবু ও রিয়াদেবীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জখমদের বিভিন্ন জায়গায় রেফার করা হয়।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলা চলার কথা ছিল। কিন্তু, রবিবার রাতে ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সোমবার সকালে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের হাত ভেঙেছে। এদিকে, এই দুর্ঘটনা অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কীভাবে মুম্বই হাইওয়ের ধারে এভাবে মেলা বসত? প্রশাসন কেন এরকম দুর্ঘটনা প্রবণ জায়গায় মেলার অনুমতি দিত? পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীর স্বামী তথা স্থানীয় সমাজশিক্ষা কেন্দ্রের কালচারাল সেক্রেটারি অমিত রাউত বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে এই পুজো এবং মেলা হয়ে আসছিল। দুর্ঘটনায় মৃত বিজয়বাবু মেলার সবটাই দেখভাল করতেন। পুলিশি নিরাপত্তাও থাকত।’