নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ঘড়ির কাঁটা তখন পৌনে দশটার ঘরে। কোলাঘাট-হলদিয়া জাতীয় সড়ক সংলগ্ন মিলননগরে লোকজনের যাতায়াত বাড়ছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সোনার দোকান। তার মধ্যে একটি দোকান একটু বড়। সেই দোকানের গেট খুলে ভিতরে ঢুকেছেন কর্মচারী সুরজিৎ কর্মকার। ধূপ দিয়ে দোকানটি খুলবেন। সবে হাতে নিয়েছেন দেশালাই। আর তখনই দোকানে ঢুকে সুরজিতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কয়েকজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। জাপ্টে ধরে পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয় দু’টি হাত। দু’টি পা’ও বাঁধা হয়। মুখে সাঁটানো হয় সেলোটেপ। সুরজিতের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একজন। তারপরেই শুরু লুটপাট। আলমারি, ভল্ট শোকেসের চাবি খুলে সব গয়না নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সোমবার সকালে এমন সিনেমার কায়দায় ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াল গোটা তমলুকে। দোকান মালিকের দাবি, সোনা ও হীরে মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার গয়না লুট হয়েছে। নগদ ছ’লক্ষ টাকাও দুষ্কৃতীরা নিয়ে পালিয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তমলুকের এসডিপিও আফজল আব্রার, থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ সহ বিশাল বাহিনী। ডাকাতির পুরো ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ সংগ্রহ করে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তমলুক, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও নন্দকুমারের বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং হলেও দুষ্কৃতীদের নাগাল পায়নি পুলিশ। মহকুমা পুলিশ অফিসার বলেন, ঘটনার সময় দোকানে একজন ছিলেন। দুষ্কৃতীরা কয়েকজন ঢুকেছিল। বন্দুক দেখিয়ে গয়না নিয়ে পালিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সুরজিতের হাত-পা বিদ্যুতের তার দিয়ে বাঁধা হয়েছিল। তাঁর গোঙানির আওয়াজ পেয়ে পাশের দোকানদার তপন কর উঁকি মেরে দেখেন, সুরজিৎ টেবিলের নীচে পড়ে রয়েছেন। হাত-পায়ে জড়ানো একটা তার। তপনবাবুর মনে হয়, ইলেক্ট্রিক শক খেয়েছেন সুরজিৎ। তারটি সরাতে তিনি একটি মস্ত লাঠি আনেন। দোকানে ঢুকতেই ভুল ভাঙে তাঁর। দেখা যায়, তার দিয়ে ওই কর্মীর হাত বাঁধা। ততক্ষণে আশপাশের লোকজন এবং দোকানদাররা জড়ো হয়ে যান। চলে আসেন দোকানের মালিক পূর্ণ অধিকারী। পুজোর মরশুমে দোকানে ভালো স্টক করেছিলেন তিনি। পূর্ণবাবুর আরও দু’টি সোনার দোকান রয়েছে। তাই কর্মীদের উপর ভরসা করতে হয়। মাত্র দেড় মাস আগে সুরজিৎ কর্মকারকে দোকানে কাজে নেন পূর্ণবাবু।
গোটা অপারেশনটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, দলে তিনজনের মতো ছিল। দুষ্কৃতীদের মাথায় টুপি ছিল। মুখ খোলা অবস্থায় ছিল। ছবি দেখে স্থানীয়রা বলেন, রবিবার সন্ধ্যায়ও দুষ্কৃতীদের লাগোয়া সুদর্শন দাসের চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য সঠিক হলে এটা স্পষ্ট অপারেশনের আগে বেশ কয়েকবার রেকি করেছিল দুষ্কৃতীরা।
পুজোর মুখে সোনার দোকান ও ব্যাঙ্কে সুরক্ষার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর তমলুক শহরে মিটিং করেছে পুলিশ। তমলুক গ্রামীণ এলাকার সোনার দোকানের সামনে পুলিশ টহল দেয় না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে রুটিন টহলের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যেই এমন সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠতে শুরু করেছে। নিজস্ব চিত্র