নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘোষণা হয়েছিল আড়াই সপ্তাহ আগেই। প্রচারের ঝংকারেও কোনও খামতি রাখেনি কেন্দ্র। জিএসটির নয়া হারে দাম কমবে নিত্যপণ্যের, এমন প্রচারের ব্যাটন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আম জনতার আবেগে শান দিতে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন দেবীপক্ষ ও নবরাত্রির উৎসবকেও। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে জিএসটির হার কমার সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল ক্রেতাদের। সেই সুবিধা মিলল কি? সোমবার বাজার ঘুরে বোঝা গেল, খুচরো পণ্যে জিএসটির সুরাহা প্রায় পেলেনই না ক্রেতারা। তবে স্বস্তি ছিল পাইকারি কেনাকাটায়। নয়া হারে জিএসটির বিল নেওয়ার ক্ষেত্রেও জিইয়ে রইল প্রযুক্তির ঝঞ্ঝাট।
শিয়ালদহের খুচরো বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যেই জিএসটি নিয়ে কোনও বাড়তি উৎসাহ ছিল না। এমনই এক বিক্রেতা গোপাল সাউয়ের কথায়, পুরোনো যে স্টক রয়েছে, সেগুলি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দশ বা বিশ টাকার বিস্কুট বা চানাচুর কিনে কেউ বিল চান না। ফলে জিএসটির রেট নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই। তাঁর মতে, নতুন দামের ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে প্যাকেটজাত মাল আসতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। তারপর জিনিসপত্রের দাম কমবে। ওই বাজারেরই পাইকারি বিক্রেতা পঙ্কজকুমার গুপ্ত বলেন, অনেক পণ্যের করের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হচ্ছে। পাইকাররা তা ১২ শতাংশ জিএসটি মিটিয়ে কিনলেও, পাঁচ শতাংশ কর চাপিয়ে বিক্রি করছে। তাতে অবশ্য ক্ষতি কিছু হবে না। কারণ, সেই খামতি নয়া ব্যবস্থায় পূরণ হয়ে যাবে। বেহালার এক ব্যবসায়ীর কথায়, প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রে নতুন জিএসটি কার্যকর করা হচ্ছে। কিন্তু কসমেটিক্স, সাবান, তেল, শেভিং ক্রিম, লোশন, খাতা, নোটবুক, ইত্যাদি সামগ্রীর ক্ষেত্রে জিএসটি সুবিধা থেকে এদিনও বঞ্চিত মানুষ। রাজেশ সাউ নামে এক মুদি দোকানের মালিকের কথায়, ‘নিজের লোকসান করে তো আর ব্যবসা করব না। পুরোনো স্টক শেষ হলেই নতুন জিএসটি হারে মাল কিনব।’ ক্রেতাদের কথায়, স্টক শেষ হওয়ার জন্য যদি অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে দিনক্ষণ ঘোষণা করে নয়া হারে জিএসটি চালুর অর্থ কী?
এদিন চিনার পার্কের এক নামজাদা পোশাক বিপণিতে কিছু কেনাকাটা করেছিলেন এয়ারপোর্ট এলাকার ব্রতীন সাহা। পেমেন্ট করতে অন্তত আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল তাঁকে। কারণ, নয়া জিএসটির হার চালু হওয়ার ক্ষেত্রে ‘সিস্টেম আপডেট’ হচ্ছে না—এমনই কথা তাঁকে শুনতে হয়েছে কাউন্টার থেকে। বেলেঘাটার অন্য একটি ব্র্যান্ডের বিপণি সকাল সাড়ে নটায় খুলেছে। দশটায় বিক্রিবাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বিল মেটানো যায়নি। পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। দিনভর অধিকাংশ শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এই সমস্যা ছিল।
ওষুধের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। যাঁরা জানেন জিএসটি কমেছে, তাঁরা ওষুধের দোকানে গিয়ে নয়া হারে জিএসটি ছাপা রসিদ চাইছেন। যাঁরা এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন, তাঁদের পুরোনো স্টকের ওষুধ আগের অর্থাৎ বেশি দামে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের একাংশ ঠকছেন।
গড়িয়াহাট চত্বরের এক কেকের দোকানের মালিকের কথায়, পেস্ট্রির দাম কাল পর্যন্ত ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। সোমবার তা কমে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা হয়েছে। হাতিবাগান বাজারের দোকানদার আশিস সাউ বলেন, মাল আগের দামেই বিক্রি করছি। পুজোর কথা ভেবে কয়েক লক্ষ টাকার মাল কিনতে হয়েছে। গোডাউনে সব ভর্তি। সেসব কি লোকসানে বিক্রি করব?