দমদমে শিশুকন্যাকে অপহরণ, মেয়ে-ভাই সহ ধৃত অধ্যাপিকা
বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত ১৭ সেপ্টেম্বর দমদম স্টেশন চত্বর থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যাকে অপহরণ করা হয়। শিশুটির মা সিঁথি থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ রবিবার গভীর রাতে কসবার এক বাড়ি থেকে উদ্ধার করে অপহৃতকে। সেই সঙ্গে পুলিশ অপহরণের অভিযোগে মেয়ে ও ভাই সহ এক অধ্যাপিকাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অধ্যাপিকার নাম অরুণিমা চন্দ। তিনি দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপিকা। তাঁর মেয়ে অনুষ্কা চন্দ চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়। মা-মেয়ে দু’জনে সোনারপুরের বাসিন্দা। সুগম পার্কের একটি অভিজাত আবাসনে থাকেন তাঁরা। অধ্যাপিকার ভাইয়ের নাম অনুপভ চন্দ। তাঁর বাড়ি কসবা রোডে। সেখানে অভিযান চালিয়েই অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনুপভকেও। কিন্তু এই অপহরণের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়েই বাড়ছে জল্পনা। অভিযুক্তরা কি কোনও পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত? নাকি আরও বড় কোনও রহস্য রয়েছে? সোমবার রাত পর্যন্ত তা স্পষ্ট হয়নি। লালবাজার জানিয়েছে, তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কখনও দমদম স্টেশন চত্বর, কখনও আশপাশের ফুটপাতে মা-বাবা ও তিন দাদার সঙ্গে থাকত শিশুটি। ১৭ তারিখ সকালে স্টেশন চত্বরেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। দীর্ঘক্ষণ মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজখুঁজি শুরু করেন মা। স্থানীয় এক দোকানদার তাঁকে জানান, এক তরুণী তাকে নিয়ে গিয়েছে। যাওয়ার সময় শিশুর হাতে একটি ডাব ছিল। এই কথা শুনে দ্রুত সিঁথি থানায় ছুটে যান মা। তদন্তের জন্য একটি বিশেষ টিম তৈরি করে পুলিশ। দমদম স্টেশন চত্বরের প্রায় ২৫টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। স্টেশনের ভিতরের একটি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে শিশুটির ছবি। দেখা যায়, তার সঙ্গে একজন তরুণী আছেন। ফুটেজ দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন মা। দেখা যায়, সেই শিশুকে নিয়ে তরুণী ক্যানিংগামী বনগাঁ লোকালে উঠছেন। ওই ট্রেনের যাত্রাপথের পরবর্তী স্টেশনগুলির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জোগাড় করে পুলিশ। ওই শিশুকে নিয়ে তরুণী গড়িয়া স্টেশনে নেমে যান। অধ্যাপিকা আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তাঁরা অটো ধরে সোনারপুরের ফ্ল্যাটে যান। পরের দিন শিশুটিকে কসবায় অনুপভের বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু, কেন এই অপহরণ? সূত্রের খবর, ধৃত অধ্যাপিকা দাবি করেছেন, ‘মেয়ের (অনুষ্কা) ওই নাবালিকাকে দেখে মায়া হয়। তাই বাড়িতে এনে রাখতে চেয়েছিল।’ তবে এই যুক্তি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি তদন্তকারীদের। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে জেনেছেন, কসবার বাড়িতে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হলে সে মায়ের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছিল। তখন অনুপভই বা পুলিশকে কেন কিছু জানালেন না? ধৃতদের আরও জেরা করে এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।