নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সাত সকালে বন্দর এলাকায় ডিসি পোর্টের দুমায়ুন অ্যাভিনিউয়ের অফিস থেকে ১০০ মিটার দূরে ফুটপাতে উদ্ধার হয় যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ। দুটি পায়ের ফাঁকে মিলেছিল আগ্নেয়াস্ত্র। যুবকের পরিচয় কী, খুন নাকি আত্মহত্যা তাই নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। বেলা গড়াতেই পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবকের বাড়ি হেস্টিংস থানার সেন্ট জর্জেস টেরাস এলাকায়। তাঁর নাম শ্রেষ্ঠ ধুরকা (৩০)। বাড়ি থেকে সুইসাইড নোট মিলতেই পুলিশ নিশ্চিত হয় শ্রেষ্ঠ আত্মঘাতীই হয়েছেন। রেসের মাঠে মোটা টাকা লাগিয়ে হেরে যান তিনি। অন্য দিকে শেয়ার ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করেও লাভের মুখ দেখেননি। বাজার থেকে টাকা ধার করে চাপে পড়ে যান। তদন্তকারীরা বলছেন, টাকার জন্য পাওনাদাররা লাগাতার চাপ বাড়ানোর কারণেই এই যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সোমবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পুলিশের কাছে খবর আসে ফুটপাতে এক যুবকের দেহ পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফুটপাত। দু’পায়ের মাঝখানে রয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, কপালে গুলির আঘাত রয়েছে। তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ও ব্যাগ মেলে। মোবাইলের সিমের সূত্র ধরে জানা যায়, ওই যুবকের নাম শ্রেষ্ঠ ধুরকা। তাঁর বাড়ি হেস্টিংস এলাকায়। জানা যায়, সেন্ট জর্জেস টেরাসের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন যুবকের পরিবার। তাঁর বাবা চোখে দেখতে পান না। তাঁর মা টিউশন করেন। অবিবাহিত শ্রেষ্ঠ ভবানীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পৈতৃক ব্যবসার সুবাদে টাকাপয়সা রয়েছে। তাঁর মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, চা খেতে বাইরে যাচ্ছি বলে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ। পুলিশের থেকেই পরিবার জানতে পারে, ছেলের মৃত্যুর ঘটনা। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। তাতে লেখা ছিল ‘সরি মম অ্যান্ড ড্যাড। আই এম নট বিইয়িং এ গুড সন’।
আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশ জেনেছে, শেয়ার ট্রেডিংয়ে লগ্নি করতে বাজার থেকে বিপুল টাকা ধার করেছিলেন শ্রেষ্ঠ। শেয়ারে বিস্তর লোকসান হয়। এরপর রেসের মাঠে টাকা লাগিয়ে পরপর হারতে থাকেন। বাজারে সবমিলিয়ে তাঁর ১৫ লক্ষেরও বেশি দেনা ছিল। এই টাকা শোধ করতে পারছিলেন না। এসবের মাঝে পড়েই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বলে পুলিস মনে করছে। যে সিঙ্গল শর্টার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, সেটি শ্রেষ্ঠ পেলেন কোথায়? খোঁজ চলছে তার।