আর একটি ফোঁটা বৃষ্টি না হলেও জলমগ্ন শহর কলকাতার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগতে পারে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা! জানাচ্ছে পুরসভা
আনন্দবাজার | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শারদোৎসবের সময় এমন নজিরবিহীন বৃষ্টি আগে দেখেনি কলকাতা। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ চলছে মঙ্গলবার সকালেও। বানভাসি শহরে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ! এমন পরিস্থিতিতে আর একটি ফোঁটা বৃষ্টি না হলেও শহরের পরিস্থিতি পুনরায় ‘স্বাভাবিক’ হতে সময় লাগতে পারে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এমনটাই জানাচ্ছেন কলকাতার পুরসভার মেয়র পরিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ।
সোমবার রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বাড়ি থেকেই কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শহরের জমা জলের পরিস্থিতির খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে জল কী ভাবে নামানো যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে গিয়ে শহরের কোথায় কী পরিস্থিতি, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখেন তিনি। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে তাঁর একাধিক বার কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারক।
যাবতীয় রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে তারক বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় কলকাতা শহরে এমন বৃষ্টি হয়েছে, এর আগে আমি কখনও দেখিনি। রাত থেকেই আমাদের সিস্টেম কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। বেশ কিছু গালিপিট ইতিমধ্যে কাজ করা শুরু করেছে। কিন্তু আবার এমন কিছু গালিপিট রয়েছে, যেগুলোকে কাজ করানো যায়নি। ফলে জল নামতে একটু সময় লাগছে।” তিনি আরও বলেন, “রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত লকগেট বন্ধ ছিল। সেই সময় পর্যন্ত আড়াইশো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। যদিও ভোর ৫টায় সময় লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিকাশি বিভাগ কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু যদি আবার বৃষ্টি হয়, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি না হলেও শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।”
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে কলকাতা শহরে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। কারণ, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আবার লকগেট বন্ধ করতে হবে। জমা জলের পরিস্থিতিতে লকগেট বন্ধ করা প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দুপুর ১২ টার পর গঙ্গায় ছ’মিনিটের জন্য একটি জোয়ার আসবে। যে কারণে লকগেট বন্ধ করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের আধিকারিকেরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। নিকাশি বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী লকগেট বন্ধ থাকার সময় আবার কলকাতায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনটা হলে কলকাতায় জমা জলের পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হতে পারে।”
কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম সুত্রে খবর, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত শহর জুড়ে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাতে উত্তর কলকাতার কয়েকটি জায়গায় জল নেমে গেলেও বিকে পাল, বিটি রোড, কলেজ স্ট্রিট, সিআর অ্যাভিনিউ, জেএম অ্যাভিনিউয়ের মতো রাস্তায় এখন জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা পুরসভার সংযুক্ত এলাকা বেহালা, বড়িশা, ঠাকুরপুকুর, জোকা, মেটিয়াবুরুজ এবং গার্ডেনরিচের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন রয়েছে। এমতাবস্থায় ফের ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে পুরসভা।
নিম্নচাপের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি
অন্ধ্র এবং ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর বঙ্গোপসাগরের বুকে একটি নিম্নচাপ গতকাল থেকে আকার নেওয়া শুরু করেছে। আগামী কালের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আগেই অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলের মাঝে কোনও অংশে তা স্থলভাগে প্রবেশ করে যাবে।
নিম্নচাপের বিস্তার
যে নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছে, তার ব্যাসার্ধ ৭০০ কিলোমিটার। তাই কেন্দ্রস্থল থেকে দু’পাশের প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার এলাকার আবহাওয়াকে এই নিম্নচাপটি নিয়ন্ত্রণ করছে।
প্রভাব ক’দিন?
আপাতত বলা যেতে পারে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগামী কাল, বুধবার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট দেখা যেতে পারে। ২৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে।
পরবর্তী নিম্নচাপ অপেক্ষায়
এই নিম্নচাপ কাটলেই আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। মায়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর। সেই নিম্নচাপ ক্রমে পশ্চিমে সরে এসে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মাঝামাঝি কোনও এলাকা দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। সেই নিম্নচাপটির ব্যাসার্ধও বেশ বড় হবে।
পরবর্তী নিম্নচাপের আভাস এখন কী ভাবে পাওয়া যাচ্ছে?
সমুদ্রপৃষ্ঠে জলভাগের তাপমাত্রার ঢাল দেখে নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার আভাস মেলে। নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার তিন-চার দিন আগে থেকেই বোঝা যায় তার আকার বিস্তার কেমন হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বর্তমান নিম্নচাপটির প্রভাব ২৮ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারে। ২৯ ও ৩০ তারিখ আবহাওয়া পরিষ্কার থাকতে পারে। তার পর থেকেই ফের পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
আরও একটি স্থানীয় নিম্নচাপ
ভূবিজ্ঞানী সুজীব করের বক্তব্য, কাঁথির উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। এই স্থানীয় নিম্নচাপের প্রভাব পড়ছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। এটির প্রভাবে আগামী কাল সকাল ১০টা পর্যন্ত এই রকমই আবহাওয়া একটানা বহাল থাকতে পারে। অর্থাৎ, আপাতত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে জোড়া নিম্নচাপের প্রভাব কাজ করছে।