• রক্ষণশীল শ্বশুরবাড়িতে বলতে পারেননি যন্ত্রণার কথা, প্রসবের সময় কাল হল সেটাই, করুণ পরিণতি মা ও সন্তানের...
    আজকাল | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বদলে গেল জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নে। প্রসবের সময়েই মৃত্যু হল স্ত্রী এবং সদ্যোজাত সন্তানের। নিজের জীবনের এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা রেডিটে ভাগ করে নিয়েছেন এক ব্যক্তি। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তাঁর স্ত্রীর শারীরিক জটিলতাগুলি কী ভাবে নজর এড়িয়ে গিয়েছিল এবং তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হয়েছিল, সেই কথাই তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর এই পোস্টে সমবেদনা জানিয়েছেন বহু মানুষ, অনেকে নিজেদের যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন।

    ‘আমার স্ত্রী আর সন্তানকে হারালাম। সকলের জন্য একটি শিক্ষা’-এই শিরোনামে করা পোস্টে ওই ব্যক্তি জানান, মাসখানেক আগেই প্রথম সন্তানের জন্মের আশায় স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুরুগ্রামের মারেনগো এশিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তাঁর স্ত্রী বা সন্তান, কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

    ওই ব্যক্তি লিখেছেন, “অবশেষে খোলসের ভেতর থেকে বেরিয়ে নিজেকে প্রকাশ করছি। গত মাসটা ভয়াবহ ছিল। একটা দুঃস্বপ্ন যা আমাকে সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে। ঠিক এক মাস আগে আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। আমার স্ত্রী এবং আমাদের সন্তান। দু'জনেই চলে গিয়েছে। এক মুহূর্তে আমরা হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছিলাম আমাদের সন্তানকে স্বাগত জানাব বলে, আর পরের মুহূর্তেই ডাক্তাররা জানালেন, তাঁরা কাউকেই বাঁচাতে পারেননি।”

    ওই ব্যক্তি আরও জানান, প্রসবের কয়েক দিন আগে থেকেই তাঁর স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। তিনি লিখেছেন, “অনেক দিন ধরেই ওঁর শরীর ভাল ছিল না। পায়ে ফোলা ভাব, মাথাব্যথা, পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল।”

    চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে, নিয়মিত পরীক্ষা করাতে এবং ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সব সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেননি। স্বামীর কথায়, তাঁর স্ত্রী প্রায়ই বলতেন, “এটা স্বাভাবিক, সব মেয়েরই এমন হয়।”

    পরে চিকিৎসকেরা জানান, এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়া ছিল। এটি গর্ভাবস্থার একটি গুরুতর জটিলতা, যেখানে উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ওই ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, “যদি আগে ধরা পড়ত, তা হলে হয়তো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায় এবং আমি দু'জনকেই হারালাম।”

    কেন তাঁর স্ত্রী নিজের অসুস্থতার কথা লুকিয়েছিলেন, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন ওই ব্যক্তি। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তাঁর শ্বশুরবাড়িতে নিজের সমস্যার কথা খুলে বলার চল ছিল না। তিনি যোগ করেন, “ও এটা ভেবেই বড় হয়েছে যে সাহায্য চাওয়াটা আসলে দুর্বলতার লক্ষণ। এমনকী আমার সঙ্গেও ও কখনও সবটা খুলে বলত না। গর্ভাবস্থায় ও ভেবেছিল, নীরবে সবটা সহ্য করে যেতে হবে। আর শেষে প্রসবের সময় ওর শরীরটা জবাব দিয়ে দিল।”

    পোস্টের শেষে তিনি সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, “যাঁরা সমস্যায় ভুগছেন, দয়া করে নিজের কষ্ট ভেতরে চেপে রাখবেন না। কারও সঙ্গে কথা বলুন, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যান। এটা আপনার এবং আপনার প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে পারে।”

    রেডিটে তাঁর এই পোস্টটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এত গভীর যন্ত্রণা ভাগ করে নেওয়ার সাহসের প্রশংসা করেছেন অনেকেই।

    এক জন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “আমি আপনার যন্ত্রণা কল্পনাও করতে পারছি না, ভাই। আপনার জন্য সত্যিই খুব দুঃখিত।”

    অন্য এক জন যোগ করেন, “এই কথাগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন। নিজের খেয়াল রাখবেন, দাদা! শক্ত থাকুন!”

    আর এক জনের মন্তব্য, “আপনি কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি ভাবতেও পারছি না, ভাই। আপনার জন্য অনেক ভালবাসা। আশা করি, এ বার থেকে আপনার জীবন ভাল হবে এবং শুধু ভাল জিনিসই ঘটবে!”

    মন্তব্যকারীদের মধ্যে এক ব্যক্তি জানান, কী ভাবে ২০২৩ সালে সন্তান জন্মের পরেই তিনি নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। তিনি লেখেন, “ভাই, ২০২৩ সালে সন্তান জন্মের পর আমি স্ত্রীকে হারিয়েছি। তার পর জীবনটা যে কী নরক হয়ে উঠেছিল, তা আজ ভাগ না করে পারলাম না।” তাঁদের জীবনে কন্যাসন্তান এলেও, জন্মের পরেই তাঁর স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকেরা এই পরিস্থিতিকে ‘পোস্টপার্টাম মায়োপ্যাথি’ বলেছিলেন, যে পরিভাষাটি তিনি কোনও দিনই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

    তিনি আরও লেখেন, “আমি আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি। এটা সারাজীবন থেকে যাবে। মাঝে মাঝেই সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়বে এবং সেই দিনগুলোতে দম্পতি হিসাবে বা ব্যক্তিগত ভাবে আপনারা যে ভুলগুলো করেছিলেন, তার জন্য অনুশোচনা হবে।” তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিপাসনার মতো পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “দুনিয়ার কেউই এটা বদলাতে পারবে না। কিন্তু জরুরি হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে এই মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে এবং আপনি পারবেন।”

    অন্য এক ব্যবহারকারী ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর তাঁর স্ত্রীকে হারানোর কথা জানান। তিনি বলেন, বিয়ের আগে ১১ বছর তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন এবং স্বামী-স্ত্রী হিসাবে মাত্র দেড় বছর কাটিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, “এমন একটা দিনও যায় না, যে দিন ওর কথা মনে পড়ে না।”

    তিনি ওই ব্যক্তিকে পরামর্শ দেন, যত কষ্টই হোক, তা যেন তিনি প্রকাশ করেন, প্রয়োজনে চিৎকার করে কাঁদেন। তিনি নিজের জীবনে কাজে লেগেছে এমন কিছু পদ্ধতির কথাও উল্লেখ করেন। “ভাই, একটা জিনিস আমাকে খুব সাহায্য করেছে, জিমে যাওয়া শুরু করা। আর যদি একা থাকতে ইচ্ছে করে, তাতেও কোনও ক্ষতি নেই। আমি ছ'মাস সকলের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম।” অন্যদের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া কতটা কঠিন, সে কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
  • Link to this news (আজকাল)