অঝোর বৃষ্টিতে ভাসল শহর, কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল, সরকারি স্কুলেও ছুটি ঘোষণা! ...
আজকাল | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটানা ভারী বৃষ্টি কলকাতায়। রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন গোটা শহর। অতীতেও যে এলাকায় জল জমেনি, সেই এলাকাতেই জল থইথই দশা। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার চিত্র, সর্বত্র এক। সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত একটানা রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে শহরে। পুজোর মুখে ভোগান্তি চরমে।
জলমগ্ন শহরের এই পরিস্থিতিতেই বড় ঘোষণা করলেন কলকাতা বি্শ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তাঁরা জানিয়েছেন, এদিন সব বিভাগের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার পরবর্তী দিনক্ষণ শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে।
পাশাপাশি আজ কলকাতার একাধিক সরকারি স্কুলেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মহালয়ায় একাধিক পুজো মণ্ডপে উদ্বোধন হয়ে গিয়েছিল। প্রবল বৃষ্টির জেরে বহু পুজো মণ্ডপেও জল ঢুকে গেছে। এমনকী কুমারটুলিতেও জল জমে চরম ভোগান্তিতে মৃৎশিল্পীরাও। জল জমেছে কলেজ স্ট্রিটেও। বহু বইয়ের দোকানে জল ঢুকে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরাও।
প্রসঙ্গত, জলমগ্ন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জীবন। সকাল থেকেই জমা জল দেখেই বাড়ছিল উদ্বেগ। বেলা বাড়তেই সেই উদ্বেগ, আশঙ্কা সত্যি হয়ে সামনে এসেছে। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য, খাস কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত পাঁচ জনের।
প্রাপ্ত তথ্য- মৃত পাঁচজনের একজন নেতাজি নগরের বাসিন্দা, একজন ইকবালপুরের বাসিন্দা, একজন বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা, একজন কালিকাপুরের বাসিন্দা এবং একজন বালিগঞ্জ প্লেসের বাসিন্দা। তথ্য, জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনেরই। তথ্য, মৃতদের মধ্যে একজনের নাম জীতেন্দ্র সিং, বয়স ৬০।
সোমবার রাত্রি থেকে বৃষ্টি শুরু। একনাগাড়ে বৃষ্টি চলছে মঙ্গল সকালেও। কয়েকঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে শহর। উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ কলকাতা একপ্রকার জলের তলায়। জলমগ্ন গোটা সল্টলেক চত্বর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাও। মঙ্গলবার শহরের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে, মানিকতলা থেকে মুদিয়ালি, সর্বত্র কোমর জল। ডুবে গিয়েছে রাস্তা-ঘাট। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, অটো জলের তলায়। লাইনে জল জমে গিয়ে ব্যাহত ট্রেন, মেট্রো চলাচল। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শহরবাসী মনে করতে পারছেন না, প্রতি বর্ষায় কম বেশি জলযন্ত্রণা হলেও, শেষ কবে এই পরিমাণ বৃষ্টির সাক্ষী থেকেছে শহর।
প্রবল বর্ষণ পরিস্থিতিতে, রেলের তরফে জানানো হয়েছে, মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে হাওড়া স্টেশন ইয়ার্ড, শিয়ালদহ দক্ষিণ স্টেশন ইয়ার্ড, চিতপুর উত্তর কেবিন, বিভিন্ন গাড়ি শেড এবং শিয়ালদহ ইয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল লাইনে জল জমেছে। জমে থাকা জল বের করার জন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় জল পাম্প বসানো হয়েছে, কিন্তু সংলগ্ন সিভিল এলাকা থেকেও জল জমে যাওয়ায় জল বের করার প্রক্রিয়া জারি থাকলেও জল পুনরায় রেলওয়ে ইয়ার্ডে ফিরে আসছে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি বিচারে, মঙ্গলবার সকালে কিছু শহরতলির ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিছু জায়গায় পরিস্থিতি বিচারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কলকাতা থেকে ১৩১১৩ আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। শিয়ালদহ থেকে ১৩১৭৭ শিয়ালদহ জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। জল জমার কারণে শিয়ালদহ দক্ষিণ বিভাগে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয় সকালের দিকে। ট্র্যাক এবং চিৎপুর ইয়ার্ডে জল জমার কারণে সার্কুলার রেলওয়ে লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ।