একরাতের বৃষ্টিতেই মৃত্যুমিছিল কলকাতায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, অতি ভারী বৃষ্টিতে মাথায় হাত সাধারণ মানুষের ...
আজকাল | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের আবহে প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাহাকার খাস কলকাতায়। একরাতেই অতি প্রবল বৃষ্টির জেরে মৃত্যুমিছিল শহরে। জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ল। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয়।
সূত্রের খবর, মৃত ন'জনের মধ্যে আটজনের মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই হয়েছে। আরেকজনের দেহে জমা জলে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয়দের অনুমান, ওই ব্যক্তিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একজন নেতাজিনগরের বাসিন্দা, একজন কালিকাপুরের বাসিন্দা, একজন বালিগঞ্জ প্লেস (গড়িয়াহাট) এর বাসিন্দা, একজন বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা, একজন একবালপুরের বাসিন্দা, একজন হরিদেবপুরের বাসিন্দা, একজন বেহালার ও একজন শেক্সপিয়ার সরণির বাসিন্দা।
দুর্গাপুজোয় বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই ছিল। কিন্তু রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার যে ছবি দেখা গেল খাস কলকাতায়, তা যেন সকলের কাছে অভাবনীয়। অনেকেরই মতে, গত এক দশকে শহরের এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা রীতিমতো জলে ভাসছে।
একটানা ভারী বৃষ্টিতে হাঁটু সমান জল কলেজ স্ট্রিটে। বহু দোকানপাট জলমগ্ন। জল ঢুকেছে বহু ক্যাফে, বিয়ের দোকানে। পুজোর মুখে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেন ব্যবসায়ীরা। দোকানে জল ঢুকে প্রচুর বই নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মতে, আমফানের সময়েও এত ক্ষতি হয়নি।
হাতে আর কয়েকদিন। তারপরেই ঠাকুর ঢুকবে মণ্ডপে মণ্ডপে। পুজো মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও চলছিল জোরকদমে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে একাধিক পুজো মণ্ডপেও জল ঢুকেছে। একাধিক এলাকায় পুজো মণ্ডপের বেহাল দশা। যা ঘিরেও মাথায় হাত শিল্পীদের।
প্রবল বর্ষণ পরিস্থিতিতে, রেলের তরফে জানানো হয়েছে, মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে হাওড়া স্টেশন ইয়ার্ড, শিয়ালদহ দক্ষিণ স্টেশন ইয়ার্ড, চিতপুর উত্তর কেবিন, বিভিন্ন গাড়ি শেড এবং শিয়ালদহ ইয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল লাইনে জল জমেছে। জমে থাকা জল বের করার জন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় জল পাম্প বসানো হয়েছে, কিন্তু সংলগ্ন সিভিল এলাকা থেকেও জল জমে যাওয়ায় জল বের করার প্রক্রিয়া জারি থাকলেও জল পুনরায় রেলওয়ে ইয়ার্ডে ফিরে আসছে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি বিচারে, মঙ্গলবার সকালে কিছু শহরতলির ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিছু জায়গায় পরিস্থিতি বিচারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কলকাতা থেকে ১৩১১৩ আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। শিয়ালদহ থেকে ১৩১৭৭ শিয়ালদহ জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। জল জমার কারণে শিয়ালদহ দক্ষিণ বিভাগে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয় সকালের দিকে। ট্র্যাক এবং চিৎপুর ইয়ার্ডে জল জমার কারণে সার্কুলার রেলওয়ে লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ।
পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যে সরকারি স্কুলগুলিতে পুজোর ছুটি ঘোষণা করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী, মমতা ব্যানার্জি। সূত্রের খবর তেমনটাই। জানা গিয়েছে, বেসরকারি স্কুলগুলিকেও পরিস্থিতি বিচারে ছুটি এগিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আজ থেকেই স্কুল ছুটি পড়বে, বাচ্চাদের আর স্কুলে আসতে হবে না।' অর্থাৎ সরকারি স্কুলগুলিতে সময়ের আগেই পড়ল পুজোর ছুটি।