জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মঙ্গলবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা। আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী বৃষ্টি হয়েছে ২৫১.৪ মিলিমিটার। অকল্পনীয় ওই বৃষ্টিতে জল থইথই মহানগর। কলকাতার অধিকাংশ রাস্তায় হাঁটুসমান জল। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হিমসিম খাচ্ছে পুরসভা। সূত্রের খবর এরকম এক পরিস্থিতিতে কলকাতার কোনও পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধব করবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবহাওয়া ভালো হলে আগামিকাল পুজো প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, গত ৬ ঘণ্টায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কলকাতায়। অতি প্রবল এই বৃষ্টি কি আসলে ক্লাউড বার্স্ট? যাকে আমরা বলি, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি! কী বলছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যন্ত শক্তিশালী বজ্রগর্ভ কিউমুলোনিম্বাস মেঘ নিম্নচাপের হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গের উপর কাল দুপুরের পর থেকে জমা হচ্ছিল। তবে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু কারণে সেগুলি আর হাওড়া জেলা ছাড়িয়ে উত্তরের দিকে যেতে পারেনি। ফলে বেশি সংখ্যক মেঘের ব্লকিং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মেঘপুঞ্জ তৈরি করে সন্ধে নাগাদ। যে কারণেই রাতে এই পরিমাণ সর্বকালীন রেকর্ড বৃষ্টি হয় কলকাতায়।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর সব কর্মসূচি বাতিল করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বেলেঘাটা ও কসবায় দুটি পুজো উদ্বোধনের কথা ছিল তাঁর। পাশাপাশি আজ ভারতীয় যাদুঘরে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বেঙ্গল ফাইলস দেখার কথা ছিল। সেই কর্মসূচিও বাতিল করা হল।
এদিকে, ভয়ংকর বৃষ্টিতে কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত হল ৮ জনের । মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কলকাতার ৮০টি রাস্তা এখনও জলমগ্ন। অনেক জায়গায় ছিঁড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার। ফলে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিপদ এড়াতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। একজনের দেহ জলে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
পরিস্থিতি বিচার করে পুজোয় আগাম ছুটি ঘোষণা করে দিলেন মমতার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্ত সরকারি অফিস ও স্কুলে পুজোর ছুটি ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২৬ তারিখ থেকে এমনিতেই পুজোর ছুটি পড়ে যাবে। তার আগেই ছুটি ঘোষণা হয়ে গেল সরকারি কর্মীদের জন্য। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর টুইটার হ্য়াণ্ডেলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ছুটি জানিয়ে দিলেন। অর্থাত্ আগামিকাল থেকেই পুজোর ছুটি।
বেহালায় বুড়ো শিবতলা এলাকায় কারখানার মধ্যে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কর্মীর মৃত্যু, নাম সুনীল সূতার। একবালপুর, গড়িয়াহাটেও মৃত্যু। নেতাজিনগরে বাবু কুন্ডু (৭০) নামে এক ফল বিক্রেতার মৃত্যু। গড়ফার কালিকাপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু এক সাইকেল আরোহীর। গড়িয়াহাটের বালিগঞ্জ প্লেসে একজনের মৃত্যু। একবালপুর হোসেন শাহ রোডে বাড়ির কাছেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ৬০ বছরের জিতেন্দ্র সিংয়ের। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে বাড়ির সামনে জল জমে ছিল। ঘর থেকে বেরিয়ে দু-পা হাঁটতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বেনিয়াপুকুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত ১। হরিদেবপুর কবরডাঙা বাজারের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু যুবকের। একবালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন এক মহিলা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুয়ায়ী সেপ্টেম্বরের বৃষ্টির নিরিখে কাল রাতের বৃষ্টি তৃতীয় স্থানে। সর্বকালীন বৃষ্টির নিরিখে ষষ্ঠ স্থানে। শহরের ৮০ রাস্তা এখনও জলের নীচে। বেশির ভাগ জায়গায় হাঁটু পর্যন্ত জল জমে।
অন্যদিকে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, চোখ রাঙাচ্ছে আরও একটি নিম্নচাপ রয়েছে উত্তরপশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে। মোটামুটি ২৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে। আবারও ভয়ংকর এক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে চলেছে কলকাতা মহানগরী। বলাই হয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে এর জেরে। মোটামুটি ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এটা। শুধু গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলেই নয়,অন্ধ্রউপকূল ও তেলঙ্গানাতেও হবে ভারী বৃষ্টিপাত। ওদিকে কোঙ্কন গোয়া মধ্য মহারাষ্ট্র অঞ্চলেও হবে বৃষ্টি। মানে, মোটামুটি ভারতজুড়ে দুর্যোগ। গত প্রায় চার দশকে সেপ্টেম্বর মাসে আলিপুরে একদিনে এত বৃষ্টি হয়নি। এত বৃষ্টি সেপ্টেম্বরের কলকাতা দেখেছিল ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে। ১৯৭৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ৩৭০ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে এবং ১৯৮৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বৃষ্টি হয়েছিল ২৬০ মিমি। আর এবার গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি ২৫১.৪ মিমি!