সন্ধ্যা ৬টা থেকে নিষ্প্রদীপ রাখা হল সল্টলেকের সমস্ত রাস্তা! জল না-নামা পর্যন্ত সব আলো নিবিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত পুরসভার
আনন্দবাজার | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। কিন্তু শহরের পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। সল্টলেক-সহ বিধাননগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখনও কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর ছুঁইছুঁই জল। পাম্পের সাহায্যে জল নামানোর কাজ চলছে। কোথাও আবার জল ঠেলেই মন্থর গতিতে চলছে গাড়িঘোড়া। সেই আবহেই বিধাননগর পুরসভা জানিয়ে দিল, সর্বত্র জল জমে থাকার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে সল্টলেকের অলিতে গলিতে বন্ধ রাখা হবে সমস্ত পথবাতি। জল না-নামা পর্যন্ত আলো জ্বলবে না সল্টলেকের কোনও রাস্তায়!
এই মুহূর্তে কোথায় কী পরিস্থিতি?
বিধাননগর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, লেকটাউন, পাতিপুকুর থেকে শুরু করে বাঙুর, কৈখালি, হলদিরাম, স্টেডিয়াম, সিএ আইল্যান্ড, নিউটাউন, বাগুইআটি— সর্বত্র এখনও জল জমে রয়েছে।
নবদিগন্ত ট্রাফিক গার্ডের অন্তর্গত বক্স ব্রিজ, অ্যারিভা মোড়, গোদরেজ ওয়াটার সাই়ড, ২১৫ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএসটিসি আসা-যাওয়ার পথ, টেকনো ইন্ডিয়া থেকে বেনফিশ যাওয়া-আসার পথে জল জমে রয়েছে। জল জমে রয়েছে সেক্টর ৫ মেট্রো স্টেশনের সামনেও। ফলে আসা-যাওয়ার দু’দিকেই পথে যানচলাচল ব্যাহত হয়েছে। ধীর গতিতে এগোচ্ছে গাড়ি।
লেক টাউন ট্রাফিক গার্ডের অন্তর্গত পাতিপুকুর আসা-যাওয়ার রাস্তা, বাঙুর লিঙ্ক রোড, এসকে দেব রোড, দমদম পার্ক, শ্রীভূমি সার্ভিস রোড থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে এখনও বেশ জল জমে রয়েছে। কৈখালিতে হলদিরাম থেকে নিউটাউন যাওয়ার রাস্তায় জল নামেনি এখনও। এয়ারপোর্টের কাছে উড়ালপুলে ওঠার মুখেও বেশ জল রয়েছে।
একই চিত্র বিধাননগরেও। স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেট, কাদাপাড়া, বিজন ভবন, করুণাময়ী, সুশ্রুত, নিউ ব্রিজ, ইন্দিরা ভবন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। কোনও কোনও রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি স্তব্ধ, আবার বেশির ভাগ রাস্তায় দীর্ঘ যানজট। এয়ারপোর্ট ২ নম্বর গেট থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে যাওয়ার পথে এখনও জল জমে রয়েছে। নিউটাউন বাসস্ট্যান্ড ও অ্যাক্সিস মল সংলগ্ন রাস্তাতেও গোড়ালি অবধি জল। চিনারপার্কের কাছে দু’দিকের রাস্তাই জলমগ্ন। জল রয়েছে হলদিরাম উড়ালপুলে ওঠার মুখেও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই সল্টলেকের সমস্ত রাস্তায় পথবাতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জমা জলে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে পুরসভার তরফে রাস্তার আলোগুলি বন্ধ রাখার কথা ভাবা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। সেখানে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মৌসম ভবনের তথ্য অনুসারে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় দীর্ঘমেয়াদি গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২,৬৬৩ শতাংশ বেশি। নিম্নচাপের প্রভাবে পুঞ্জীভূত মেঘ থেকেই এত বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতায়। সেই হিসাবে এটি শহরে বৃষ্টির ষষ্ঠ রেকর্ড।