বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যু: সিইএসসির গাফিলতিকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী, মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস
আনন্দবাজার | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দুর্যোগের কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এই মৃত্যুর জন্য সিইএসসি-কেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বেলায় ‘নিউজ়১৮ বাংলা’-কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এর দায় সিইএসসি-কে নিতে হবে। এখনই তারা জরুরি ভিত্তিতে কর্মীদের নামাক।” এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। বেসরকারি ওই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে তোপ দেগে মমতা বলেন, “এখানে ব্যবসা করছে। আর পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের (মডার্নাইজ়েশন) কাজ করছে রাজস্থানে। আর এখানে আধুনিকীকরণের কাজ করছে না। বলতে বলতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে।”
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি মৃতদের পরিবারের পাশে থাকবেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “মৃত্যুর কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না, জীবনের কোনও বিকল্প হয় না। তবুও আমরা (মৃতদের) পরিবারের এক জনের চাকরি নিশ্চিত করব। ক্ষতিপূরণ দিতে বলছি সিইএসসি-কেও। আমি সিইএসসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আন্তরিক সমবেদনার পাশাপাশি এই ক্ষতিপূরণও পরিবারগুলির প্রাপ্য।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি এমন বৃষ্টি কখনও দেখিনি। শুনেছি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাত-আট জন মারা গিয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, এত মানুষ প্রাণ হারালেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি প্রতিনিয়ত কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ডিভিসি-কে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে লেখেন, “এক তরফা জল ছাড়ায় রাজ্য এমনিতেই প্লাবিত ছিল, নদী, খাল সব টইটম্বুর ছিল। ফরাক্কা জলাধার দিয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশের প্রচুর জল আসছে, সেখানে ড্রেজ়িং না-হওয়ায় সমস্যা তো ছিলই । তার ওপরে এল এই হঠাৎ বিপুল বৃষ্টি।”
রাতভর ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতার বিভিন্ন অংশ। এখনও পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্তত আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাত জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মারা গিয়েছেন। বাকি এক জনের মৃত্যুর কারণ এখনও অবধি স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরবাসীর মনে। বহু জায়গাতেই দেখা গিয়েছে বিদ্যুতের খোলা তার পড়ে রয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই সিইএসসি-র পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার মেয়র ফিরহাদের মতোই মঙ্গলবার সকলকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ কারও বেরোনোর প্রয়োজন নেই। বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে অনুরোধ, দয়া করে আজ আপনারা কারও ছুটি কাটবেন না।” বিষয়টি মানবিক ভাবে পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। বেসরকারি অফিসগুলিকে আগামী দু’দিন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ (বাড়ি থেকে কাজ) করার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারী অফিসেও দু’দিন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করা হবে বলে জানান তিনি।
তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের সকলে রাস্তায় থাকবেন। তবে চেষ্টা করলেও কলকাতা পুরসভা জল বার করতে পারছে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জলটা বার করবে কোথায়? সব তো ডুবে আছে।” পরে গঙ্গায় জোয়ার এলে ফের শহরের একাংশ জলমগ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা এবং শহরতলিতে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হলেও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি। পুজোর আগে ক্ষয়ক্ষতি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “কী আর করা যাবে। পুজো কমিটিগুলোর অসুবিধা হবে। আজ আর কালটা একটু দেখে নিতে হবে। হাতে সময় আছে।” কেন্দ্র জিএসটি বাবদ প্রাপ্য টাকা কেটে নিচ্ছে, এমন অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় টাকা দিতে দিতেই আমাদের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
মঙ্গলবার সকালে একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। পাশাপাশি নেতাজিনগর, বেনিয়াপুকুর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেহালা এবং হরিদেবপুরেও দু’জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। এ ছাড়া গড়িয়াহাটেও এক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। গড়ফাতেও এক সাইকেল আরোহীর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতা এবং শহরতলিতে। একটানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। উত্তর থেকে দক্ষিণ— গোটা শহরেই একই পরিস্থিতি। বিভিন্ন গলিপথও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে। বহু বাড়ি ও গাড়ি জলের নীচে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব রাস্তায় আগে কখনও জল জমেনি, সেই রাস্তাও জলের তলায়। এই সব এলাকা থেকে জল বার করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই জল নামতে দেরি হচ্ছে।