বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা, পরিস্থিতি বিচারে মঙ্গলবার থেকেই স্কুলে পুজোর ছুটি? বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর...
আজকাল | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটানা ভারী বৃষ্টি কলকাতায়। রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন গোটা শহর। তথ্য, এর আগে, এত কম সময়ে এই তুমুল বৃষ্টি এবং এই ভয়াবহ জলমগ্ন পরিস্থিতি এর আগে দেখেনি এই শহর। তার মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় পুজো প্যান্ডেল। কোমর জলে ডুবে গাড়ি, একাধিক জায়গায় এক তলায় জল ঢুকেছে হুহু করে। বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ বিদ্যুৎ পরিষেবা।
পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যে সরকারি স্কুলগুলিতে পুজোর ছুটি ঘোষণা করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী, মমতা ব্যানার্জি। সূত্রের খবর তেমনটাই। জানা গিয়েছে, বেসরকারি স্কুলগুলিকেও পরিস্থিতি বিচারে ছুটি এগিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আজ থেকেই স্কুল ছুটি পড়বে, বাচ্চাদের আর স্কুলে আসতে হবে না।' অর্থাৎ সরকারি স্কুলগুলিতে সময়ের আগেই পড়ল পুজোর ছুটি।
মঙ্গলবারেই রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর জানায়, পরিস্থিতি বিচারে ২৪ এবং ২৫ তারিখ অর্থাৎ বুধ এবং বৃহস্পতিবার সরকারি, সরকার পোষিত, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে (পাহাড়ি এলাকার স্কুলগুলি ছাড়া)। ছুটি থাকবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রাজ্যে স্কুল-কলেজগুলিতে পুজোর ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার অর্থাৎ ২৬ তারিখ থেকে। সেই ছুটিই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল দু' দিন।
একইসঙ্গে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের কর্মীদের মঙ্গলবার, অর্থাৎ এই দুর্যোগপূর্ণ দিনে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। জানিয়েছেন আজকের দিনে, দুর্যোগের মাঝে কেউ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে না পারলে, তা কর্মীদের ছুটি হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। তিনি বলেন, 'অফিসযাত্রীদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। আজ প্রয়োজনে অফিস আসতে হবে না। যদি দেখেন কালও জল না কমছে, তাহলে আজ, কাল ছুটি গণ্য হবে না। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।' একই সঙ্গে সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মানবিকতার বিচারে বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও আজ এবং আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গল এবং বুধবার কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার ব্যবস্থার কথাও বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'আজ কাউকেই বেরনোর দরকার নেই। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বলব, আজকের দিনে কর্মীদের ছুটি কাটবেন না। তাঁরাও তো মানুষ। তাঁদের বাড়িতেও জল ঢুকে গিয়েছে। এটি মানবিকতার দিক থেকে বিচার করতে হবে।'
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মঙ্গলবারেই এক সংবাদ মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই দুর্যোগে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁর সমবেদনা রয়েছে ওই পরিবারগুলির প্রতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে মৃতের নিকটাত্মীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। তিনি বলেন, 'সিইএসসি-কে অনেকবার বলেছি কলকাতায় ওয়্য়ারগুলো ঠিক করতে। শুনেছি ৭–৮ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই পরিবারগুলোকে সিইএসসি-কে সাহায্য় করতে হবে। তাঁদের একটা করে চাকরি দিতে হবে, আমি স্পষ্ট জানাচ্ছি। যা যা সম্ভব, আমরাও করব। আমরাও ভুগছি, আমাদের ঘর বাড়িও ডুবে গেছে। পুজোর মণ্ডপগুলোর জন্যও খারাপ লাগছে। এটা কি সিইএসসি-র দায়িত্ব নয়? বিদ্যুৎ সিইএসসি দেয়, সরকার নয়। মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা করা তাদেরই কর্তব্য। এখানে ব্যবসা করবে, কিন্তু এখানে আধুনিকীকরণ করবে না? দ্রুত মাঠে নামুক, কাজ শুরু করুক।'
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী CESC-এর ভূমিকা নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সিইএসসি-র ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোমবার রাত্রি থেকে বৃষ্টি শুরু। একনাগাড়ে বৃষ্টি চলছে মঙ্গল সকালেও। কয়েকঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে শহর। উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ কলকাতা একপ্রকার জলের তলায়। জলমগ্ন গোটা সল্টলেক চত্বর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাও। মঙ্গলবার শহরের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে, মানিকতলা থেকে মুদিয়ালি, সর্বত্র কোমর জল। ডুবে গিয়েছে রাস্তা-ঘাট। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, অটো জলের তলায়। লাইনে জল জমে গিয়ে ব্যাহত ট্রেন, মেট্রো চলাচল। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শহরবাসী মনে করতে পারছেন না, প্রতি বর্ষায় কম বেশি জলযন্ত্রণা হলেও, শেষ কবে এই পরিমাণ বৃষ্টির সাক্ষী থেকেছে শহর।