প্রবীর চক্রবর্তী: রাতভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর। অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিন জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। পরিস্থিতি ঘিরে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে শহর জুড়ে। খোলা তার, জলমগ্ন রাস্তায় বিপদ আরও বাড়ছে।
এই আবহে সরাসরি সিইএসসি-র পরিকাঠামোকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee blames CESC for loss of life due to exposed power lines)।
আজ CESC-র অবহেলায় কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের পরিবারের জন্য আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয়না, জীবনের কোন বিকল্প হয় না। তবুও আমরা প্রতি পরিবারের একজনের চাকরি নিশ্চিত করব। ক্ষতিপূরণ দিতে বলছি CESC কে-ও। আমি CESC-র সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি তাঁর X হ্যান্ডেলে বলেছেন- 'আকস্মিক দুর্যোগের আক্রমণে বিপর্যস্ত কলকাতা শহরের ও লাগোয়া কিছু এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমাদের সহকর্মীরা ও আধিকারিকরা সর্বত্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিভিসি-র একতরফা জল ছাড়ায় রাজ্য এমনিতেই প্লাবিত ছিল, নদী, খাল সব টইটম্বুর ছিল। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে আসছে বিহার, উত্তরপ্রদেশের প্রচুর জল, সেখানে ড্রেজিং না হওয়ায় সমস্যা তো ছিলই । তার ওপরে এল এই হঠাৎ বিপুল বৃষ্টি। আমি মেয়র, মুখ্যসচিব প্রমুখের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছি, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছি।
আমি বলেছি, আজ থেকে সরকারী সব স্কুল ছুটি থাকবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও আগামী দু-দিন ছুটি। বেসরকারী অফিস গুলি আগামী দু'দিন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করুন। সরকারী অফিস-ও দুদিন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে। মানুষকে বাঁচানোই এখন প্রাথমিক কাজ।
আজ CESC-র অবহেলায় কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের পরিবারের জন্য আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয়না, জীবনের কোন বিকল্প হয় না। তবুও আমরা প্রতি পরিবারের একজনের চাকরি নিশ্চিত করব। ক্ষতিপূরণ দিতে বলছি CESC কে-ও। আমি CESC-র সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আন্তরিক সমবেদনার পাশাপাশি এই ক্ষতিপূরণ-ও পরিবারগুলির প্রাপ্য।
আমরা পাশে আছি, সব সময়, প্রতিটি মুহূর্তে। নবান্নে কন্ট্রোল রুম খুলেছি, আমি দেখছি। কন্ট্রোল রুম সারাক্ষণ খোলা আছে।
ফোন নম্বর- 91-33-22143526/ 91-33-22535185. এ ছাড়াও টোল ফ্রি নম্বর- 91-8697981070
আজ আর কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে কোথাও যাচ্ছি না। জেলার পুজোগুলি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে দেব। কয়েকটা দিন এখন খুব সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।'
শুধু দায় চাপিয়েই থামেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সিইএসসি-র কাছে মৃতদের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানান। মৃতদের পরিবারের পাশে রাজ্যও যে রয়েছে, তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এও পরিষ্কার করেছেন, রাজ্য প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বতোভাবে রাস্তায় থাকবে। তবে তাঁর কথায়, “জলটা বার করবে কোথায়? সব তো ডুবে আছে।”
একবালপুরের হোসেন শাহ রোড থেকে নেতাজিনগর, বেনিয়াপুকুর, বেহালা, হরিদেবপুর, গড়ফা— শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একই ছবি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক মানুষ। গড়িয়াহাটেও উদ্ধার হয়েছে এক দেহ। বহু জায়গায় পড়ে রয়েছে খোলা তার। আতঙ্কে দিন কাটছে শহরবাসীর।
এ দিকে, নাগাড়ে বৃষ্টিতে উত্তর থেকে দক্ষিণ, জলমগ্ন গোটা শহর। বহু রাস্তা, যেগুলিতে আগে জল জমেনি, সেগুলিও ডুবে গিয়েছে হাঁটু সমান জলে। গঙ্গায় ফের জোয়ার এলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
এ ব্যাপারে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'নদীতে টগমগ জল, ক্যানেলগুলো ভরে আছে। আমরা পুরসভার ড্রেন থেকে জল ফেলতে গেলেই ব্যাক ফ্লো হয়ে তা আবার শহরে ফিরে আসছে। দুপুর দেড়টায় বড় বান আসবে। সেই বান কেটে গেলে তবেই জল নামানো সম্ভব হবে। আগে জল খালে যাবে, খাল থেকে নদীতে, তারপর সমুদ্রে। এর বাইরে কোনও উপায় নেই।'