সল্টলেক-নিউটাউন জলমগ্ন, বাড়িতে জল ঢুকে দুর্ভোগ, বাতিল ৯১ বিমান
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বিধাননগর: সাত সকালে সল্টলেকের করুণাময়ী যেন নদী। জল জমেছে সেক্টর ফাইভ, নিউটাউনেও। বাগুইআটি, কেষ্টপুর, লেকটাউন, দমদম পার্ক সর্বত্র একই ছবি। দত্তাবাদ ও জ্যাংড়া এলাকায় বহু বাড়ির ভিতরেও ঢুকে গিয়েছে জল। জমা জলের জন্য সাধারণ মানুষকে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। ভিআইপি রোডেও জল থাকায় ট্রাফিক ধীরে চলছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সল্টলেকের এ কে ব্লকের পুজোর উদ্বোধনও করেছেন। অন্যদিকে, জল-বৃষ্টি ও যানজটে এদিন আটকে পড়েন বিমান সংস্থার কর্মীরা। যার জেরে একদিনে ৯১টি বিমান বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সল্টলেকের যে সকল ব্লকে জল জমে না, সেখানেও এদিন জল জমে গিয়েছিল। বেশ কয়েকটি গাছও পড়েছিল। লেকটাউন, বাঙ্গুর, দমদমপার্ক, বাগুইআটি, কেষ্টপুরের বেশিরভাগ জায়গায় জল জমে গিয়েছে। স্মার্টসিটি নিউটাউনে জল জমার ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়েছে। নিউটাউন বাসস্ট্যান্ড, অ্যাক্সিস মলে সার্ভিস রোড দীর্ঘ সময় জল জমেছিল। তবে, এনকেডিএ’র টিম জমা জল নামাতে সকালেই নেমে পড়ে। অনেক জায়গায় দ্রুত জল নেমেও গিয়েছে। কিন্তু এদিন রাত পর্যন্ত সেক্টর ফাইভ জলমগ্ন ছিল। জানা গিয়েছে, মেট্রোর কাজের জন্য এখানকার প্রধান নিকাশি নালাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টেকনোপলিস থেকে ৫ নম্বর পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোর কাজের জন্য এল, বিএল ক্রসিংয়ের কাছে নিকাশির ক্ষতি হয়েছে। সল্টলেকের ২১৫ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএসটিসি’র দু’ধারে, জে কে সাহা থেকে গোদরেজ ওয়াটার সাইড, ওয়েবেল মোড়ের দু’ধারে, চিংড়িঘাড়া ফ্লাইওভার থেকে লোহাপুল, টেকনোপলিস থেকে কিয়া মোটরস, এয়ারপোর্টমুখী বক্স ব্রিজ, কলকাতামুখী নবদিগন্ত ফ্লাইওভার চত্বরে জল জমে যাওয়ায় সল্টলেক বাইপাসে ট্রাফিক স্লো হয়ে যায়। ভিআইপি রোডেও গাড়ির গতি কম ছিল। কৈখালির হলদিরাম, চার্ণক হাসপাতালের সামনে সার্ভিস রোড এবং মেন রোডে জল জমে যাওয়ায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়েছে। দুর্যোগ এবং জমা জলের জন্য মঙ্গলবার রাতে সমস্ত স্ট্রিটলাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিধাননগর পুরসভা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কেএমডিএ, হিডকো এলাকায় মেট্রোর কাজের জন্য রাস্তায় পাথর-বলি ফেলে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জল জমেছে। ওদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। রাজারহাট, নিউটাউন, সল্টলেকের ড্রেন যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সেটা ওদের দায়িত্ব নিয়ে দেখতে হবে।’ অন্যদিকে, জমা জল ও তীব্র যানজটের কারণে সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি বিমান সংস্থার কর্মীরা। মূলত যে বিমানগুলি রাত ১২টার পর থেকে কাকভোর পর্যন্ত ছিল, সেই বিমানের পাইলট, ক্রু মেম্বার, বিমান সংস্থার অন্যান্য কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি। ফলে বিমান চালানো যায়নি। শয়ে শয়ে যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে বিমান ধরতে আসতে পারেননি। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় কিছু সময়ের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরে। পার্কিং’বে ৩২ থেকে ৪০ জলে ডুবেছিল বলে জানা যায়। দ্রুত জল নামাতে পাম্পের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে ৯১টি বিমান বাতিল করতে হয়। আসা-যাওয়া মিলিয়ে দেরিতে চলে ৯৫টি বিমান। চিনার পার্ক, হলদিরাম, কৈখালি, এয়ারপোর্ট ১ নম্বর সহ বেশ কিছু জায়গায় জল জমে ছিল।