পৌঁছনোই দায়, শহর থেকে বিচ্ছিন্ন উল্টোডাঙা-বালিগঞ্জ
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরের এক দিকে বালিগঞ্জ, অন্য দিকে উল্টোডাঙা। মঙ্গলবার কলকাতার এই দুই প্রান্ত কার্যত বিচ্ছিন্ন দু’টি হ্রদের মতো পড়ে রইল দিনভর। উল্টোডাঙা, হাডকো মোড়, আন্ডারপাস, কাঁকুড়গাছি আন্ডারপাস-সব জায়গায় কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত জল। অন্যদিকে বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, গোলপার্ক এলাকাতেও একই ছবি। ফলে বিপর্যস্ত জনজীবন। ব্যাপক ভোগান্তি মানুষের। জলে ডোবা রাস্তায় গাড়ি, বাইক, বাস চালাতে গিয়ে বিপত্তি। বিকল বহু গাড়ি। রাস্তাজুড়ে খারাপ হয়ে যাওয়া গাড়ির লাইন। বালিগঞ্জে আটকে যায় দুর্গা প্রতিমা নিয়ে আসা গাড়িও।
এদিন দক্ষিণ কলকাতায় বাসের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। গড়িয়া থেকে গোলপার্ক যাওয়ার অটোও মেলেনি। ঢাকুরিয়ে ব্রিজের উপর অটো থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তার উপর মাথাপিছু ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া দাবি করেছেন অটোচালকরা। রুবি মোড় থেকে বিজন সেতু পর্যন্ত যেতে অটো ১০০ টাকা চেয়েছে। তবে বিকেলের পর ভাড়া কমে। হয় ৩০ টাকা। রুবি থেকে বালিগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করেছে বাস। কিছু বাস গড়িয়াহাটে জল ডিঙিয়ে হলেও গিয়েছে। বিজন সেতু শেষ হতেই প্রায় কোমর সমান জল। তাতে কার্যত হাবুডুবু খেয়েছে মানুষ। টানা রিকশয় জল পেরিয়ে অনেকে বিজন সেতু পর্যন্ত এসেছেন। তার জন্য গুনতে হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এরই মধ্যে জমা জলে দাঁড়িয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ খিচুড়ি বিতরণ করেছে। রাস্তায় বিপুল জলোচ্ছ্বাস দেখে থমকে গিয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স। বিজন সেতু, কসবার সামনে সারি দিয়ে বিকল হয়ে যাওয়া বাইক, গাড়ি, বাস দাঁড়িয়ে। প্রায় একই পরিস্থিতি উল্টোডাঙাতেও।
সেখানে সকালের পর জমা জল দেখে অধিকাংশ বাস উল্টোডাঙামুখী হয়নি। উত্তর শহরতলি থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে যে বাসগুলি বাইপাস কিংবা শিয়ালদহের দিকে যায়, সেগুলি লেকটাউন পর্যন্ত এসে ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। কেউ উল্টোডাঙা এড়িয়ে ওল্ড দুর্গাপুর ব্রিজে ওঠার আগেই ভিআইপি থেকে দক্ষিণদাঁড়ি, গোলাঘাটার কাছে স্লিপ ব্রিজ হয়ে বাইপাস ধরেছে। উল্টোডাঙা থেকে খান্না যাওয়ার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার উপর বন্ধ ছিল অটো চলাচল। কিছু অটো চলেছে। তবে তারা ভাড়া হেঁকেছে আকাশছোঁয়া।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের দু’প্রান্তে এমনই নিদারুণ জলছবি দেখল শহর। মানুষের বক্তব্য, ‘এখানে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি। কিন্তু এমন জল কখনও দেখিনি।’ নিকাশির হাল বলার মতো অবস্থায় ছিল না। জমা জলের মধ্যে প্লাস্টিক, বাক্স ভাসতেও দেখা দিয়েছে। ‘জল কখন নামবে?’ দিনভর সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন।