বানভাসি কলকাতা, ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিপর্যয়, মৃত ৯, পুজোর মুখে শঙ্কায় বাংলা
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি। ঘুম ভেঙে শহরবাসী দেখল বানভাসি কলকাতা। কারও বাড়ির একতলা জলমগ্ন তো কোনও বহুতল আবাসনের লিফট বিকল। কারণ, জলে ভাসছে গ্রাউন্ড ফ্লোর। রাস্তার ধারের দোকানগুলি অর্ধেকের বেশি ডুবে গিয়েছে। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ। পুজোর আবহে মেতে ওঠা শহরে যেন আচমকা নেমে এসেছে দৈব দুর্বিপাক!
সোমবার রাতে ৬ ঘণ্টায় ২৫১.৪ মিলিমিটারের বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। ১৯৮৬ সালের পর যা রেকর্ড। কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন শহরতলি এলাকায়ও কমবেশি একই অবস্থা। জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। আটজনই কলকাতার। জখম হয়েছেন আরও একজন। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সার্বিক পুজো-প্রস্তুতি। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে বসে জল নামানোর কাজের তদারকি করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
সোমবার সন্ধ্যা থেকেই গুমোট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় বৃষ্টি। কারও মনে হয়নি যে এই বৃষ্টিই চলবে টানা প্রায় ৬ ঘণ্টা। রাত পোহালেই বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠা শহরকে। ভোররাতের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে অনেকটা। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ২.৩০টা পর্যন্ত শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৪৮ মিলিমিটার। তার পরের তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত বেড়েছে প্রায় ৫ গুন। ওই সময়ে শহরে বৃষ্টির পরিমাণ ১৮৫.৬ মিলিমিটার। সেপ্টেম্বর মাসের হিসেবে কলকাতায় এই বৃষ্টিপাত তৃতীয় সর্বোচ্চ। সকালের দিকে বৃষ্টি ধরলেও জল সেভাবে নামেনি। তার অন্যতম কারণ, গঙ্গায় ভরা জোয়ার। অগত্যা শ্যামবাজার থেকে উল্টোডাঙা, পার্ক সার্কাস থেকে বালিগঞ্জ, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে নিউ আলিপুর, পাটুলি থেকে বেহালা—সর্বত্র জলছবি কার্যত অপরিবর্তিত থাকে কয়েক ঘণ্টা। জলযন্ত্রণা থেকে বাদ যায়নি শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। শিল্পতালুক সেক্টর ফাইভের অবস্থাও ছিল একই।
অফিসযাত্রীরা চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। সকালের দিকে কিছু বাস, ট্যাক্সি বেরলেও রাস্তাতেই সেগুলি থেমে যেতে বাধ্য হয়। বিজন সেতু, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, মানিকতলা, হাডকো মোড়, ই এম বাইপাসে দেখা যায়, বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে বাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব, বাইক। ট্রেন-মেট্রোর পরিষেবাও ব্যাহত হয়। হাওড়া-শিয়ালদহ শাখায় বহু লোকাল ও ৩০টির বেশি দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করতে বাধ্য হয় রেল।
পুজোর আগে বৃষ্টি-অসুরের এহেন দাপটে দুশ্চিন্তা বেড়েছে সংশ্লিষ্ট সব মহলে। আবহাওয়া দপ্তরের বক্তব্য, এই নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে পশ্চিমে সরে গেলেও ২৫ সেপ্টেম্বর ফের একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হবে। সেটির প্রভাবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে শঙ্কায় বাংলা।