• জোয়ারের সময়ই ভারী বৃষ্টি, খোলাই গেল না লকগেট...
    বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মাত্র পাঁচ ঘণ্টা, তার মধ্যেই শহরজুড়ে গড়ে ২৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি! যার জেরে কার্যত ‘বন্যা’ শহরে। জমা জলে দুর্ভোগ, নাগরিক ভোগান্তির ছবি তিলোত্তমায়। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অস্বাভাবিক বৃষ্টির জেরে প্রায় সারাদিন শহরের কোথাও বুক সমান জল, কোথাও হাঁটুজল জমে যায়। কিন্তু কেন নামানো গেল না জল? কলকাতা পুরসভার ব্যাখ্যা, ভোর পর্যন্ত গঙ্গায় জোয়ার থাকায় লকগেট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ঠিক সেই সময় গোটা শহর ভাসিয়ে গত চার দশকের ‘রেকর্ড’ বৃষ্টি হয়েছে। শহরের ৮২টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পুরো জলের তলায় ছিল। পুরসভার নিকাশি বিভাগ জানাচ্ছে, জোয়ারের জেরে রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার ৪টে পর্যন্ত গঙ্গার ধারের সমস্ত লকগেট বন্ধ রাখতে হয়। আর এই সময় অঝোরে বৃষ্টি নামে শহরে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাত একটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে। শহরের ৮টি পাম্পিং স্টেশন জোনে ২৫০ মিমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ১৩টি পাম্পিং স্টেশন জোনে ১৫০ বা ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে গড়িয়া কামডহরি পাম্পিং স্টেশন জোনে (৩৪০ মিমি)। ভোর থেকেই সক্রিয় ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিংও সাতসকাল থেকেই ময়দানে নামেন। দুজনেই পুরসভার কন্ট্রোলরুমে এসে শহরজুড়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। পাম্পিং স্টেশনের পাশাপাশি অস্থায়ী পাম্প বসিয়ে জল নামানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু অস্বাভাবিক বৃষ্টির জেরে খালগুলি সব ভর্তি। জল ‘ব্যাক ফ্লো’ হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় জল নেমেছে। তবে রাতের মধ্যেই সব জল নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। 

    পুরসভার নিকাশি বিভাগের ব্যাখ্যা, শহরের কোনও পাম্পিং স্টেশন এলাকায় ২০০, ২৫০ এমনকি ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে-এটা নতুন নয়।  কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ধরনের রেকর্ড বৃষ্টি শহরে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে হয়েছে। কিন্তু এভাবে শহরের সর্বত্র ২০০ বা ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হচ্ছে, সেটা অকল্পনীয়। আগে এমন পরিস্থিতি আসেনি।

    শহরে জমা জল প্রসঙ্গে তারক সিং বলেন, দশ বছর আগেও শহরের ভূগর্ভস্থ নিকালি নালা ঘণ্টায় ৬ মিমি বৃষ্টির জল নামানোর ক্ষমতা রাখত। কিন্তু দফায় দফায় সংস্কার এবং বছরভর পলি তোলার জেরে বর্তমানে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঘণ্টায় ২০ থেকে ২২ মিমি বৃষ্টির জল নামাতে পারে। কিন্তু, এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টি এবং লকগেট না খুলতে পারার কারণে সর্বত্র এই জল-ছবি।

    নিকাশি বিভাগের আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, গঙ্গা ছাড়াও কলকাতার সব থেকে বেশি জল টানে শহরজুড়ে থাকা বিভিন্ন নিকাশি খাল। যেগুলি বেশিরভাগ বিদ্যাধরী নদীর সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যাধরী নদীতেও জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। শহরের খালেও জল বেশি ছিল। ফলে বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশন থেকে জল খালে ফেলা যায়নি। বরং খালে জল ‘ওভার ফ্লো’ হচ্ছে, এমনকি খাল থেকে পাম্পিং স্টেশনেও জল ‘ব্যাক ফ্লো’ হয়েছে। আবার মঙ্গলবার বেলা বারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্তও গঙ্গায় জোয়ারের জেরে লকগেট বন্ধ হয়েছিল। ফলে তখনও শহরের জল নামানো যায়নি।নিকাশি উন্নয়নে ২১৮ কোটি বরাদ্দনিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা, হাওড়া এবং নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) অধীনে থাকা এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নে সম্প্রতি ২১৮.৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে নবান্ন। 

    নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভাকে ১৫৬ কোটি টাকা, হাওড়া পুরসভাকে ৪৭.৮৫ কোটি টাকা এবং এনকেডিএকে দেওয়া হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই বরাদ্দ অর্থ ব্যবহার করে মূলত উন্নত নিকাশি ব্যবস্থার কাজ করা হবে। 

    প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, কলকাতার নিকাশি সংস্কারের জন্য একাধিক কাজ করা হয়েছে। একইভাবে হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থার জন্যও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তবে বেশ কিছু এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে জানিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
  • Link to this news (বর্তমান)