• পুজো হবেই, বার্মার জেলেও অনশনে নেতাজি, বড়দিনের জন্য ১২০০, দুর্গাপুজোয় ব্রিটিশরা ৫৬০ টাকা দেবে না!
    বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • কলহার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: মাত্র ৫৬০ টাকা। সে সামান্য টাকাটা দিতেও সুভাষচন্দ্র বসুকে নাকানিচোবানি খাইয়েছিল ইংরেজরা। দিলে কী হতো? জেলের মধ্যে দুর্গাপুজো করতেন সুভাষরা। বন্দিরা আনন্দ পেতেন। উৎসব করতেন। ঐক্যবদ্ধও হতেন। তা আন্দাজ করেই ইংরেজদের কুটিল মন টাকা দিতে অস্বীকার করে। পত্রপাঠ নাকচ হল পুজোর অনুদানের আবেদন। ঘটনাটি ঠিক ১০০ বছর আগের। সে বছরও সেপ্টেম্বরেই পড়েছিল পুজো। এ বছরের থেকে চারদিন আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর। তা ইংরেজরা যদি নিজেদের শক্তিশালী রাজপুরুষ ভাবেন তাহলে সুভাষও কম বীরপুরুষ নন। পুজো তিনি করেই ছাড়লেন। বার্মার মান্দালয় জেলে সম্পূর্ণ উপাচার মেনে হল দুর্গাপুজো। বন্দিরা আনন্দে ভাসলেন। সুভাষচন্দ্রের দাদা খদ্দরের ধুতি-চাদর পাঠিয়েছিলেন। ধূর্ত ইংরেজ রাজপুরুষরা কলকাঠি নেড়ে তা পাঠাতে দেরি করেন। তবে পুজোর পর হলেও নতুন কাপড় পরেন বন্দিরা।

    ১০০ বছর আগে সে ঘটনায় তোলপাড় দেশ। অনুদান না দেওয়ার প্রতিবাদে কয়েক মাস পর অনশন শুরু করলেন সুভাষ সহ অন্যান্য বন্দিরা। ব্রিটিশদের শ্যেনচক্ষু এড়িয়ে খবর পেল ফরোয়ার্ড পত্রিকা। সে খবর ছাপা হল। তারপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ। দিল্লিতে আইনসভার অধিবেশনে বিষয়টি তুললেন স্বরাজ্যপন্থী তুলশীচন্দ্র গোস্বামী। ভয়ঙ্কর চাপে পড়ে গেল ব্রিটিশ সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হলেন। অনুদান মঞ্জুর করতে বাধ্য হল ইংরেজরা।

    এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে ব্রিটিশদের এরচোখোমির একটি দৃষ্টান্ত। এর আগে জেলে খ্রিস্টান কয়েদিদের উৎসব-অনুষ্ঠান করার জন্য বছরে ১২০০ টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট। অথচ দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে কাঁচকলা দেখাল। বৈষম্যের ছবি স্পষ্ট। বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই অনশন শুরু মান্দালয় জেলে। এবং আন্দোলন সফল। ‘সুভাষচন্দ্রের জীবনে দেবী দুর্গা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে এ বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন সন্দীপকুমার দাঁ। সেই লেখায় এই সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত আছে।

    তা দেশের থেকে দূরে বার্মার এক কুখ্যাত জেলে বসে সুভাষের দুর্গার আরাধনার কারণ কি? ‘ভারত পথিক’ লেখাটিতে আগেই সুভাষ লিখেছিলেন, ‘দেশী পুজো পার্বণের মধ্যে দিয়ে দলকে গড়ে তোলার এক পরীক্ষায় নামলাম...’ 

    ১৯২৪ সালে সুভাষচন্দ্র কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচিত হন। তার কিছু পর পুজোয় যোগ দিতে কোদালিয়ার বাড়ি আসেন। তখন স্থানীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই ২৫ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করে ইংরেজরা। প্রথমে আলিপুর জেল। তারপর বহরমপুর জেল। শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রহ্মদেশ অর্থাৎ বার্মার মান্দালয় জেল। সেখানেই পুজো করা নিয়ে জেল থেকে দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তীদেবীকে এক চিঠিতে সুভাষ লিখছেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে জেলের মধ্যেও তিনি এসে দেখা দিয়েছেন। আমরা এই বৎসর এইখানেই শ্রীশ্রীদুর্গাপুজো করিতেছি। মা বোধহয় আমাদের কথা ভোলেন নাই, তাই এখানে এসেও তাঁহার পূজা-অর্চনা করা সম্ভবপর হইয়াছে...। জেলখানার অন্ধকারের মধ্যে নির্জীবতার মধ্যে-পূজার আলো, পূজার আনন্দ বিলীন হয়ে যাবে। এইরূপে কয় বৎসর কাটবে জানি না। তবে মা যদি এসে বৎসরান্তে একবার দেখা দিয়ে যান, তবে কারাবাস দুর্বিসহ হইবে না ভরসা করি...’। 

    মা দুর্গার আশীর্বাদে এই পুজোর দু’বছর পর, অর্থাৎ ১৯২৭ সালে মান্দালয় জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন সুভাষ।
  • Link to this news (বর্তমান)