হাসপাতালে জলের নীচে ৯ কোটির যন্ত্র, বাতিল বহু অপারেশনও
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অভাবনীয় বৃষ্টিপাত। আর তার ফলে নষ্ট হয়ে গেল স্বাস্থ্যদপ্তরের ৯ কোটি টাকার যন্ত্র! এর মধ্যে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন এবং একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। হাই-এন্ড এমআরআই মেশিনটির দামই প্রায় ৮ কোটি টাকা। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের দাম এক কোটির বেশি। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ঘটেছে এই কাণ্ড। সূত্রের খবর, পিপিপি মডেলে চলা এই দু’টি ইউনিট রয়েছে ন্যাশনালের চক্ষু বিভাগের একতলায়। ভোর ৫টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করা হয় সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার বিশ্বনাথ রায়কে। তিনি বলেন, ‘জল ঠেলে সকাল ৬ টা নাগাদ এমআরআই ইউনিটে ঢুকেই দেখি, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। হাঁটুসমান জলে ভাসছে গোটা ঘর। মেশিনের নীচের অংশ জলের তলায়।’
গোটা ইউনিট জলমগ্ন হয়ে পড়ার আগেই এমআরআই মেশিনের যাবতীয় বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কিছু জরুরি যন্ত্রাংশ সরানো হয় নিরাপদ জায়গায়। অপরিহার্য দু’টি মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ন্যাশনালে রোগ পরীক্ষার পরিকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হল। কারণ, শুধু নিউরোলজি বা নিউরোসার্জারি নয়, বর্তমানে প্রায় সমস্ত বিভাগের চিকিৎসাতেই এমআরআই, সিটি স্ক্যান এবং ডিজিটাল এক্স-রে জরুরি। রাতভর বৃষ্টিতে ন্যাশনালের প্রশাসনিক ভবনের একতলার বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের একাংশও জলে ডুবে যায়।
শুধু ন্যাশনালই নয়, কলকাতার পাঁচ মেডিকেল কলেজেই কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একাধিক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি, আউটডোর জলে ভেসে যায়। ভাসতে থাকে বিভিন্ন আসবাব, যন্ত্রপাতি। অন্যান্য মঙ্গলবারের তুলনায় এদিন ২০ শতাংশ রোগীও হয়নি। সোমবারের তুলনায় এদিন রোগীর সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কম ছিল। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আসতে গিয়ে মাঝরাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে অনেকের। অসুস্থ পরিজনের জন্য স্ট্রেচার জোগাড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পলিথিনে ঢেকে দেওয়া, হাসপাতালের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নিয়ে যেতে অবর্ণনীয় ভোগান্তি—এসবই ছিল দিনভর দুর্ভোগের খণ্ডচিত্র। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘অফিসারদের বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছি।’
চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ মঙ্গলবার হাসপাতালে আসতেই পারেনি। স্বাস্থ্যভবনের অধিকাংশ কর্মী-অফিসার অনুপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে খারাপ হয়ে যায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের গাড়িও। জল থইথই অবস্থা ছিল বাইপাস লাগোয়া একাধিক প্রাইভেট হাসপাতালেও।