• টানা বৃষ্টিতে কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ১০
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সোমবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া বজ্রপাত এবং টানা বৃষ্টির কারণে কলকাতা ও আশেপাশের জেলাগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শহর জলমগ্ন হওয়ায় খোলা বিদ্যুতের তারে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ৮ জন বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন, একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

    প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে শেক্সপিয়র সরণি থানার এলাকায়, যেখানে হোটেল নীহারিকার কর্মী পবন ঘরামী (৩৪) ইনভার্টার চালু করার সময় বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এরপর একের পর এক বিভিন্ন থানার এলাকায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এক্কেবালপুরে জিতেন্দ্র সিংহ (৬০) ও বেনিয়াপুকুরে ফিরোজ আলি খান (৫০) জলে ভেসে উদ্ধার হলেও চিকিৎসকরা জানান, তাঁরা বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়েছিলেন। গড়ফা থানার কালীকাপুর মোড়ে সাইকেলে যাওয়ার সময় প্রাণ হারান রাম গোপাল পণ্ডিত (৫৩)।

    নেতাজিনগর মোড়ের কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় প্রান্তোষ কুণ্ডু (৬২)-কে। বেহালা থানার শিবতলা রোডে শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিতরে মারা যান সুনীল সুর্য (৩৫)। হারিদেবপুরে কর্মশালার ভিতরে কাজ করার সময় বিদ্যুতের শিকার হন যুবক সুব্রত প্রামাণিক (২৫)। গড়িয়াহাট থানার অন্তর্গত বালিগঞ্জ প্লেসে মৃত অবস্থায় মেলে সন্দীপ গুহঠাকুরতা (৬০)। এছাড়া এক্কেবালপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডে বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন মুমতাজ বিবি (৭০), যিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

    এছাড়া জেলাতেও আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বিষ্ণুপুরের আমতলায় একজন, উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই ভিআরপি কর্মীর নাম মিরাজুল আলি। সব মিলিয়ে রাজ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

    শহরের এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি সিইএসসি কর্তা সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে ফোন করে খোলা বিদ্যুতের তারগুলির নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তিনি মৃতদের পরিবারকে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন থেকে জেলার পুজোগুলির ভারচুয়াল উদ্বোধনের সময় তিনি পুনরায় প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেন।

    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বড় বান এসেছে। আজ পর্যন্ত তার প্রভাব রয়েছে। আস্তে আস্তে নামবে। গঙ্গা খালি হবে। কিন্তু অন্য জায়গায় বৃষ্টি হলে আমরা কী করতে পারি?’

    তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতায় জল জমা কমেছে। এবার আমাদের সামলাতে হচ্ছে বিহার, উত্তরপ্রদেশের জলও। পাঞ্চেত, ফরাক্কা, ময়ূরাক্ষী, ডিভিসি কিছু আমাদের অধীনে নয়। কেন্দ্র ড্রেজিংয়ের টাকা দেয় না। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব লিখছেন, তাঁদের বলছি, দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি করবেন না।’

    মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি মেট্রো কর্তৃপক্ষকেও দায়ী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘সল্টলেক, নিউটাউন এলাকায় জল জমার জন্য মেট্রোর কাজের জন্য বালি ও অন্যান্য জিনিসপত্র নালা বন্ধ করে দিয়েছে। এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে।’ এছাড়া তিনি সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে বের না হতে সতর্ক করেছেন।

    রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান উল্লেখ করেছেন, ‘আমাদের সরকার সাড়ে পাঁচ লক্ষ পুকুর খুঁড়েছে। বাংলার জল বাংলা সামলাবে। কিন্তু বাইরে থেকে যে জল ঢুকে পড়ছে, তা রোখা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। টানা ৪-৫ মাস বর্ষা চলেছে, পুজোও এগিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে মানুষের এই দুর্ভোগ।’

    প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যুতের খোলা তারে প্রাণহানির প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘৮-৯ জন মারা গিয়েছেন। সিইএসসি-কে বলেছি, রাস্তায় পড়ে থাকা তারগুলো সরাতে হবে।’ মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও নিশ্চিত করেছেন।

    পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের অধিকাংশই জল জমে থাকা রাস্তায় বা বাড়ির ভিতরে বিদ্যুৎ স্পর্শে প্রাণ হারিয়েছেন। দপ্তর ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে।

    এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কাউকে রাজনীতি না করে দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। সরকার এবিষয়ে এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারল না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেন, মৃতদের পরিবারকে তিন কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের একজন সদস্যকে গ্রুপ সি চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)