কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মস্তিষ্ক! ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণে মৃত্যুমিছিল এই রাজ্যে, আতঙ্কে কাঁপছেন সাধারণ মানুষ ...
আজকাল | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্রেন ইটিং অ্যামিবা বা ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ ঘিরে কেরলে ক্রমেই আরও উদ্বেগ বাড়ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও বাড়ল সংক্রমণ। কিন্তু কীভাবে ছড়াচ্ছে ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, তা ঘিরে এখনও ধোঁয়াশায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কেরলের প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৮০ জন। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকা ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, 'এখনও অবধি এই রোগের উৎস পাওয়া যায়নি। তবে রোগ শনাক্তকরণের জন্য সমস্ত মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে অ্যামিবা শনাক্ত করা যায়।'
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, আগে এই রোগটি কোঝিকোড় ও মালাপ্পুরম জেলার কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে তিন মাসের শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছরের বয়স্করা পর্যন্ত রয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘গত বছরের মতো এবার সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট উৎস দেখা যাচ্ছে না।’
এখনও অবধি যে তথ্য মিলেছে, তাতে এই সংক্রমণটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এটি মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে। যার ফলে মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ফুলে ওঠে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যু হয়। এই রোগটি খুবই বিরল এবং সাধারণত শিশু, কিশোর বা তরুণদের মধ্যে দেখা যায়।
আরও জানা গেছে, নাইগ্লেরিয়া ফোলেরি একটি এককোষী জীব। যা সাধারণভাবে ‘ব্রেন–ইটিং অ্যামিবা’ নামে পরিচিত সেটি সাধারণত গরম, বিশেষ করে বদ্ধ, মিষ্টি জলে বাস করে। দূষিত জল নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে এই সংক্রমণ হয়। তবে এই দূষিত জল পান করলে রোগের লক্ষণ দেখা যায় না। তাই যারা পুকুর বা হ্রদের মতো বদ্ধ মিষ্টি জলে সাঁতার কাটেন, ডুব দেন বা স্নান করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ হু হু করে ছড়াতেই উচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন কেরলের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বীণা জর্জ। এই পরিস্থিতিতে নোংরা, অপরিষ্কার পুকুরে স্নান, কুয়োর জল পান, স্নান করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। অপরিষ্কার পুকুরে সাঁতার কাটা থেকেও স্থানীয়দের বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রতিটি সুইমিং পুল পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক, কুয়ো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গেলে, তড়িঘড়ি যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরে গত জুলাই মাসে কেরলের এই জেলাই এখনও পর্যন্ত ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে আটজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একই রোগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও দু’জন কেরলের বাসিন্দা। তিন মাসের এক শিশুও আক্রান্ত। তিনটি ঘটনাই কোঝিকোড় জেলার। বর্তমানে একাধিক সদ্যোজাত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এই সংক্রমণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকেরই শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে ভারতে প্রথমবার ব্রেন ইটিং অ্যামিবার আক্রান্তের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল। ২০১৬ সালে কেরলে প্রথমবার এই রোগ ধরা পড়ে। গতবছর, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র কেরলেই ৩৬ জন ঘিলু খেকো অ্যামিবা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। চলতি বছরেও ক্রমেই বাড়ছে ঘিলু খেকো অ্যামিবার সংক্রমণের সংখ্যা। যা ঘিরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।