• আকাশের দুর্যোগ থামলেও মেট্রোয় দুর্ভোগ কাটল না! ‘স্বাভাবিক’ পরিষেবাতেও রাতের যাত্রীরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ
    আনন্দবাজার | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মঙ্গলবার বিকেলেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত (ব্লু লাইন) পরিষেবা স্বাভাবিক। অর্থাৎ, দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত পুরো পথেই চলছে মেট্রো। কিন্তু সত্যিই কি স্বাভাবিক হয়েছে পরিষেবা? যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। কোনও মেট্রোই সময়ে আসছে না। কখনও ১০, কখনও ১৫, কখনও আবার ২০ মিনিট মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে স্টেশনে।

    সোমবার রাতভর বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাস্তায় বাস, অটো, ট্যাক্সির দেখামেলা ভার। রেলপথেও দুর্ভোগের ছবি দেখা গিয়েছে। অনিয়মিত হয়ে পড়ে রেল পরিষেবা। হাওড়া, শিয়ালদহ বিভাগ— সর্বত্রই একই ভোগান্তি। বাদ যায়নি মেট্রোও। পার্পেল লাইন (জোকা-মাঝেরহাট), গ্রিন লাইন (হাওড়া ময়দান-সেক্টর ফাইভ), অরেঞ্জ লাইন (কবি সুভাষ-বেলেঘাটা) ও ইয়েলো লাইনে (নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর) স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাহত হয় কলকাতা মেট্রোর ‘আদিম’ লাইনের পরিষেবা।

    মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভাঙাপথে মেট্রো চলে। টানা বৃষ্টির কারণে ব্লু লাইনে মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) এবং রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের মাঝে লাইনে জল জমে যায়। আর তাতেই পরিষেবা ব্যাহত হয়। প্রথমে মেট্রোর তরফে জানানো হয়, লাইনে জল জমার কারণে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান অংশে পরিষেবা বন্ধ। ময়দান থেকে দক্ষিণেশ্বরের পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। বেলা গড়ানোর পরে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে মাস্টারদা সূর্য সেন পর্যন্ত পরিষেবা চালু করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তবে মাস্টারদা সূর্য সেন থেকে ময়দান পর্যন্ত পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধই ছিল বিকেল পর্যন্ত।

    মঙ্গলবারের দুর্যোগের পর বুধে কেমন থাকবে কলকাতার আবহাওয়া? আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস
    বিকেলের পর পরিষেবা স্বাভাবিকের কথা জানান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিট থেকে পুরো পথে অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত মেট্রো চলছে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র আলাদা। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শ্যামবাজার থেকে দমদম যাবেন বলে মেট্রো স্টেশনে পৌঁছেছিলেন সুবর্ণ দাস। শ্যামবাজার স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন, পাঁচ মিনিট আগে মেট্রো গিয়েছে। হিসাব করে তিনি দেখেন দু’তিন মিনিটের মধ্যেই দক্ষিণেশ্বরগামী মেট্রো আসবে। ঘটনাচক্রে, সকাল থেকেই মেট্রোর ডিসপ্লে বোর্ড ‘দেহ’ রেখেছে! অর্থাৎ, কোন মেট্রো কখন আসবে জানতে পারছিলেন না কেউই। সন্ধ্যার পর পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও ডিসপ্লে বোর্ডের সমস্যা মেটেনি। সুবর্ণের কথায়, ‘‘স্টেশনে আসার অন্তত ১৫ মিনিট পর মেট্রো পেলাম। সকাল থেকেই দুর্ভোগ। কী ভাবে বাড়ি পৌঁছোব জানি না।’’

    রাতের দিকেও মেট্রো ‘অনিয়মিত’! যাত্রীদের একাংশের দাবি, ডাউন লাইনে (শহিদ ক্ষুদিরামগামী) পরিষেবা মোটের উপর ঠিকঠাক থাকলেও আপ লাইনে (দক্ষিণেশ্বরগামী) সময়ে মেট্রো চলছে না। রাত ৯টার দিকে চাঁদনি চক থেকে দমদম যাওয়ার মেট্রো ধরতে গিয়ে সুবর্ণের মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছে সায়ন্তন পালের। ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সায়ন্তনের কথায়, ‘‘৯টা নাগাদ স্টেশনে এসেছি। ২০ মিনিট হয়ে গেল। এখনও দমদমের দিকে যাওয়ার কোনও মেট্রো আসেনি।’’ শেষমেশ রাত ৯টা ২৭ মিনিটে দক্ষিণেশ্বরগামী একটি মেট্রো আসে। তাতে চেপেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন সায়ন্তন।

    ডাউন লাইনের পরিষেবা যে পুরোপুরি স্বাভাবিক, তা মানতে নারাজ যাত্রীদের একাংশ। শ্যামনগরের বাসিন্দা সুতনুকা হাজরা রোজ রাতে শেষ বা তার আগের মেট্রো ধরে চাঁদনি চক আসেন। ওই এলাকারই এক কোম্পানিতে রাতের ডিউটি করেন তিনি। রোজকার মতো মঙ্গলবারও শ্যামনগর থেকে দমদমে এসে মেট্রো ধরবেন বলে এসেছিলেন সুতনুকা। দমদম স্টেশনে যখন তিনি ঢোকেন ঘড়িতে তখন রাত ৯টা ২৫। খুব ভিড় না-হলেও স্টেশনে কয়েক জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, পাঁচ মিনিট আগে শহিদ ক্ষুদিরামগামী মেট্রো গিয়েছে। পরের মেট্রো কখনও আসবে? উত্তর দিতে পারেননি সহযাত্রীরা। সুতনুকার কথায়, ‘’১৫ মিনিট স্টেশনে বসে থাকার পর ডাউন লাইনের শেষ মেট্রো ধরলাম।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)