কাচের দরজার ফাঁক গলে দোকানের ভিতরে জল ছুঁয়েছে গোড়ালি সমান। সেই নোংরা জলে ভাসছে দোকানে সাজানো নতুন জুতো। দরজায় ছোট পাম্প চালিয়ে দোকানের ভিতরের জল বার করতে কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বিশেষ কাজ হচ্ছে না। সামনের রাস্তায় হাঁটুজল পেরিয়ে এক-একটা গাড়ি যাচ্ছে, আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ফের জল ঢুকে পড়ছে দোকানে! জল থই থই বাজারে মঙ্গলবার সকালে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান খুললেও অধিকাংশেরই ঝাঁপ বন্ধ।
হাতিবাগান শুধু নয়, মঙ্গলবার জমা জলে শুনশান বাজারের এ হেন দৃশ্য দেখা গেল গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটেও। যা দেখে বোঝার উপায় নেই, দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গিয়েছে। এক রাতের বর্ষণে কার্যত পণ্ড হতে বসেছে পুজোর আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। দুপুর পেরিয়ে গড়িয়াহাট বাজারে তা-ও জল নেমেছে। তবে হাতিবাগান, নিউ মার্কেট-সহ অধিকাংশ বাজারে জল নামতে বিকেল গড়িয়ে যায়। গোটা শহর জলমগ্ন থাকায় কেনাকাটা করতে কেউ বেরোনোর সাহস দেখাননি। বিক্রিবাটা তো দূর, ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই দোকান বন্ধ রেখে সামগ্রী বাঁচাতে ব্যস্ত থেকেছেন। রাতভর বৃষ্টিতে দোকানে জল ঢুকে যে পরিমাণ জিনিস নষ্ট হয়েছে, তাতে সেই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে, সেটাই ভাবাচ্ছে তাঁদের।
স্থায়ী দোকানে তুলনামূলক ভাবে ক্ষতি কম হলেও এক রাতের বৃষ্টি বজ্রপাতের মতো নেমে এসেছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের উপরে। ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভারী বৃষ্টির আগাম পূর্বাভাস না থাকায় অধিকাংশই সোমবার রাতে ফুটপাতের উপরে কোনও রকমে প্লাস্টিক মুড়িয়ে ব্যবসার সামগ্রী রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টির পরে সেখানে এসে দেখেন, রাস্তা ছাপিয়ে ওঠা জলে ভাসছে তাঁদের পসরা। ভিজে গিয়েছে প্লাস্টিকে মোড়া ব্যবসার সমস্ত সামগ্রী। গড়িয়াহাট বাজারের ফুটপাতে বাচ্চাদের জামাকাপড় বিক্রেতা ধীমান সাহা বললেন, ‘‘মহালয়ার পরেই মূলত ছোট দোকানগুলিতে কেনাকাটা হয়। এই সময়ে সবাই জিনিস ফুটপাতেই মুড়ে রেখে চলে যান। কয়েক লক্ষ টাকার জামাকাপড় জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফেরত পাঠিয়ে নতুন জিনিস যে তুলব, পুজোর আগে সেই সময়ও নেই। এ বার হয়তো পথে বসতে হবে।’’
একই অবস্থা হাতিবাগান, নিউ মার্কেট, লেক মার্কেটেও। অধিকাংশ বাজারই ছিল জলমগ্ন। দুপুর পেরিয়েও হাতিবাগান বাজারের জল না কমায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। হাতে গোনা কয়েক জন ব্যবসায়ী দোকান খুললেও সামগ্রী বাঁচাতেই ব্যস্ত থেকেছেন।
এ দিন গণপরিবহণে জমা জলের প্রভাব পড়ায় শহরতলি থেকেও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ শহরমুখো হননি। শহরের অধিকাংশ রাস্তা জলমগ্ন থাকায় কেউ বাজারেও যাননি। হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জয় রায় বললেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পুজোর জন্য সামগ্রী তোলেন। জিএসটি-র জন্য অনেকেই রবিবারের পরে বেচাকেনা শুরু করেছিলেন। ভিড় বাড়তেও শুরু করেছিল। এক রাতের বৃষ্টিতে সব শেষ। ব্যবসার আর কিছুই থাকল না এ বছর।’’