মহুয়া খুন হয়েছিলেন? বড়পর্দায় ফাঁস হবে রহস্য! তাঁর জীবনীছবিতে ছোটপর্দার কোন নায়িকা
আনন্দবাজার | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মহুয়া রায়চৌধুরী মদ্যপ, উচ্ছৃঙ্খল? প্রতি রাতে তিনি নাকি নতুন পুরুষসঙ্গী খুঁজতেন?
অভিনেত্রীর জীবনের মতোই তাঁর মৃত্যুও ধোঁয়াশায় মোড়া। তিনি কি আত্মহত্যা করেছিলেন? নাকি খুন হয়েছিলেন? অভিনেত্রীর চলে যাওয়ার ৪০ বছর পরেও এই কৌতূহল বাঙালির মনে। সেই উত্তর খুঁজতেই পরিচালক সোহিনী ভৌমিক আগামী বছর পরিচালনা করবেন ‘গুনগুন করে মহুয়া’। বুধবার প্রয়াত অভিনেত্রীর ৬৭তম জন্মদিন। এ দিন প্রকাশ্যে এল সেই ছবির নায়িকার নাম। ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’র নায়িকা অঙ্কিতা মল্লিক বড়পর্দার ‘মহুয়া’।
গত দেড় বছর ধরে মহুয়াকে নিয়ে ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন সোহিনী। এই ছবি দিয়ে বড় ছবি পরিচালনার দুনিয়ায় পা রাখছেন তিনি। প্রযোজক রানা সরকার। আনন্দবাজার ডট কম সেই খবর প্রথম জানিয়েছিল। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। কতটা উত্তেজিত তিনি? প্রশ্নের জবাবে সোহিনী বললেন, “মহুয়া মানেই যেন কেবল নেতিবাচক ঘটনার সমাহার। আমিও একজন নারী। সেই জায়গা থেকে বিষয়টি খুবই খারাপ লাগত। তখনই মনে হয়েছিল, ওঁর জীবনের ভাল দিকগুলো কোনও দিনই কি জানবেন না তাঁর অনুরাগীরা?” এই ভাবনা থেকেই ছবি তৈরির ইচ্ছাপ্রকাশ প্রযোজকের কাছে।
সোহিনীর কথায়, “রানাদা অনুমতি দিতেই মহুয়াকে নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। দেখলাম, সন্তানকে চোখে হারাতেন। ছেলেকে রেখে কাজে বেরোতেন বলে অপরাধবোধে ভুগতেন। একই ভাবে খুব অল্পসময়ে প্রচুর হিট বাংলা ছবি টলিউডকে উপহার দিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় মহুয়া মাত্র ২৬!” এই দিকগুলোর পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির কনিষ্ঠতম পরিচালক অভিনেত্রীর প্রয়াণের কারণ খোঁজার চেষ্টা করবেন। এও জানিয়েছেন, যাঁরা সিনেমা ভালবাসেন তাঁরা এখনও মহুয়ার কথা বলেন। তাঁদের কথা ভেবেও এই ছবি।
মহুয়ার চরিত্র যে কোনও অভিনেত্রীর কাছে লোভনীয়। পাশাপাশি, চরিত্রের ভারও যথেষ্ট। একসময় শোনা গিয়েছিল, স্বস্তিকা দত্ত সোহিনীর ‘মহুয়া’ হতে পারেন। অঙ্কিতাকে কেন বাছলেন প্রযোজক-পরিচালক?
রানার মতে, “অঙ্কিতার মহুয়া হয়ে ওঠার খিদে প্রচণ্ড। এটাই আমায় আকর্ষণ করেছে। তা ছাড়া, প্রয়াত অভিনেত্রীর অল্পবয়সটাও ধরতে হবে। তাই সব মিলিয়ে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে বেছেছি। আর মহুয়ার সঙ্গে চেহারার যথেষ্ট মিল আছে।” এ ভাবেই তিনি ছোটপর্দার অভিনেতাদের বড়পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টায় রয়েছেন। যেমন, ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির নামভূমিকায় ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’-র নায়ক দিব্যজ্যোতি দত্ত। কিংবা ‘এম্পারর ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ ছবিতে দেখা যাবে ‘ফুলকি’ ধারাবাহিকের নায়িকা দিব্যাণী মণ্ডলকে। চলতি বছরের শেষ থেকেই অঙ্কিতার ‘মহুয়া’ হয়ে ওঠার প্রস্তুতি শুরু হবে। তাঁকে সাজাবেন রূপসজ্জাশিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু আর পোশাকপরিকল্পক সাবর্ণী দাস।
যিনি মহুয়ার জুতোয় পা গলাতে চলেছেন সেই অঙ্কিতাও প্রচণ্ড খুশি। ধারাবাহিকের শুটিংয়ের ফাঁকে বললেন, “প্রথমে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়েছে। মহুয়া রায়চৌধুরীর ছবি দেখেছি। ওঁকে ঘিরে আমারও অনেক কৌতূহল।” সেই জায়গা থেকেই তাঁর আগ্রহ ‘মহুয়া’ হয়ে ওঠার।
মাত্র ২৬ বছরে খ্যাতনামী হলেও অনেক আঘাত, অনেক অন্যায় সহ্য করতে হয়েছে। মহুয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রত্না ঘোষাল যেমন এখনও আক্ষেপ করেন, “ছেলের দুধ গরম করতে গিয়ে মা পুড়ে মারা গেল! এটা বিশ্বাসযোগ্য?” জীবন তাঁকে যা দিল না, বড়পর্দার ছবি কি পারবে তা দিতে? তাঁর আজীবনের কালিমা ধুতে পারবে? পরিচালকের বিশ্বাস, তিনি পারবেন। বাকিটা সময় বলবে।