• আচমকা চাকরি থেকে বরখাস্ত, ক্ষতিপূরণ চাওয়ায় চরম শারীরিক নির্যাতন, নয়ডার বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন কর্মীর অভিযোগ শুনলে চমকে উঠবেন
    আজকাল | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নয়ডায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় এক বহুজাতিক সংস্থার প্রাক্তন কর্মী অভিযোগ করেছেন, চাকরি থেকে হঠাৎ ছাঁটাইয়ের পরে সেভারেন্স পেমেন্ট, অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ চাওয়ায় তাঁকে দফায় দফায় হেনস্থা ও শারীরিক নিগ্রহের মুখে পড়তে হয়েছে সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স (HR) বিভাগের হাতে। খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

    সম্প্রতি ওই কর্মী তাঁর অভিজ্ঞতা বিশদে বর্ণনা করেছেন রেডিটের ‘r/IndianWorkplace’ সাবরেডিটে একটি পোস্টে। পোস্টের শিরোনামে তিনি লিখেছেন, "টিসিএস আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে, তারপর এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে এইচআর আমাকে মারধর করেছে - এখন আমার কী করা উচিত?" এই পোস্ট ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা ও কর্মচারীদের অধিকারের বিষয় ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা।

    পোস্টে তিনি লিখেছেন, চলতি মাসের ১৯ তারিখে নয়ডার অফিসে তাঁকে হঠাৎ করেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। কোনও কারণ দর্শানো হয়নি। এমনকী দেওয়া হয়নি ক্ষতিপূরণও। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে এই সিদ্ধান্ত, এবং তাঁর সেভারেন্স পেমেন্ট ‘সেপারেশন প্রসেস’ কীভাবে হয়।

    “এইচ আর কোনও যুক্তি না দিয়েই আমায় টার্মিনেট করে, সেভারেন্স দেবে না জানিয়ে দেয়, তার পর অফিসেই আমায় মারধর করা হয়। আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এখন জানি না কী করব,” - লিখেছেন তিনি।

    তাঁর অভিযোগ, সকাল ১০:৩০ নাগাদ তাঁর অফিস অ্যাক্সেস ব্লক করে দেওয়া হয়। এর পর বিকেল ৪:৩০ নাগাদ তিনি নিজেই অফিসে পৌঁছন এইচ আর-এর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু সেখানে তাঁর প্রশ্ন শুনেই এইচ আর-এর সোজাসাপটা জবাব, “কোনও উত্তর দেব না। টার্মিনেট হয়ে গিয়েছ। যেখানে খুশি যাও, যা খুশি করো।”

    এরপর ফের একবার তিনি কথা বলার চেষ্টা করেন এবং গোপনে সেই সময় মোবাইলে কথোপকথনের রেকর্ডিং শুরু করেন। তখনই এক সদস্য চিৎকার করে বলেন, “ওর ফোন কেড়ে নিন!” ঠিক তারপর শুরু হয় শারীরিক আক্রমণ। “আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়। আমার ডান হাত মোচড়ে ধরা হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল, আর চরম অপমানিত লাগছিল,” দাবি ওই প্রাক্তন কর্মীর।

    ঘটনার পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সেক্টর-১৬৮ পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানেই তিনি লিখিত অভিযোগ জানান এবং ভিডিও প্রমাণ জমা দেন।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রাক্তন কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে এইচ আর টিমকে থানায় হাজিরা দিতে বলা হলেও, তাঁরা আসেননি। প্রাক্তন কর্মী এখন চাইছেন বিষয়টি আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে - হয়তো ডিসিপি স্তরে।

    “পুলিশ পর্যন্ত বলেছিল এইচ আর-কে থানায় আসতে। কিন্তু ওরা এল না। এখন আমি কী করব বুঝতে পারছি না- না কোনও সেভারেন্স পেলাম, না কোনও লিখিত জবাব, উপরন্তু এই শারীরিক নিগ্রহ" লিখেছেন তিনি।

    এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের বন্যা। অনেকেই তাঁকে আইনি পথে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ঘটনার ভিডিও প্রমাণ জনসমক্ষে আনলে মামলার পক্ষে সুবিধা হবে। আবার কারও মত, অবিলম্বে কোনও অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

    এদিকে, ঘটনার প্রেক্ষিতে এক্সপ্রেসওয়ে থানার অধীন সেক্টর-১৬৮ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

    প্রসঙ্গত কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, চরম হতাশাজনক বিষয়। প্রশ্ন উঠেছে, আজকের কর্পোরেট যুগে কর্মীদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গেলে কি এমন নিপীড়নের মুখেই পড়তে হবে?
  • Link to this news (আজকাল)