• নিট পরীক্ষায় ৯৯.৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়েও ‘আত্মহত্যা’, কারণ জানলে চোখে জল আসবে ...
    আজকাল | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলার নওরাগাঁও গ্রাম এক করুণ ঘটনার সাক্ষী হল। মাত্র ১৯ বছর বয়সী অনুরাগ অনিল বরকরের অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গোটা এলাকায়। অনুরাগ, যিনি সম্প্রতি দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা NEET UG 2025-এ অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, তিনি নিজের জীবনের ইতি টেনে দিলেন সেই দিনেই যেদিন তিনি গোরখপুরে গিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছিলেন।

    পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অনুরাগ সিন্ডেভাহি তালুকার নওরাগাঁওয়ের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি এবছর নিট পরীক্ষায় ৯৯.৯৯ পারসেন্ট পেয়েছিলেন এবং অল ইন্ডিয়া র্যাষঙ্কিংয়ে ওবিসি ক্যাটাগরিতে ১৪৭৫ নম্বর স্থান অর্জন করেছিলেন। এই ফলাফল যেকোনও পরিবারের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু এই সাফল্যই যেন তাঁর জীবনে অদৃশ্য চাপের পাহাড় তৈরি করেছিল। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল পরিবার ও সমাজের, কিন্তু হয়তো তা অনুরাগের নিজের ইচ্ছার সঙ্গে মিলছিল না।

    ঘটনার দিন, গোরখপুর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল অনুরাগ ও তাঁর পরিবার। কিন্তু যাত্রার আগে ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। যদিও সরকারিভাবে চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি, তবে তদন্তকারী সূত্রের দাবি— অনুরাগ লিখে গিয়েছিলেন তিনি ডাক্তার হতে চান না।

    এই ঘটনায় চন্দ্রপুরের নওরাগাঁও পুলিশ মামলা রুজু করেছে এবং তদন্ত চালাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা পূরণের চাপেই এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনুরাগ।

    শিক্ষাজীবনে চাপ নতুন নয়। বিশেষত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার যুগে, অনেক কিশোর-কিশোরী নিজেদের উপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেয়। পরিবারের ইচ্ছা, আত্মীয়দের প্রত্যাশা আর সমাজের চোখে “সফল” হওয়ার বাধ্যবাধকতা অনেক তরুণের মানসিক জগৎ ভেঙে দেয়। অনুরাগের ঘটনাও হয়তো তারই প্রতিচ্ছবি।

    মনোবিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করে বলেছেন— পড়াশোনা বা কেরিয়ার জীবনের একটি মাত্র অংশ। জীবন অনেক বিস্তৃত, তার চেয়ে বড় কিছু আছে। একজন তরুণ যদি মনে করেন তাঁর স্বপ্ন অন্য পথে, তবে সেই কণ্ঠস্বর পরিবারকে শোনার প্রয়োজন। কারণ চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়তো সাময়িক সাফল্য আনতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা মানসিক ক্লান্তি, হতাশা এমনকি আত্মঘাতী প্রবণতার জন্ম দিতে পারে।

    এই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের উদ্দেশে বার্তা দিচ্ছেন— সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাঁদের মনের কথা শুনুন, তাঁদের স্বপ্নকে গুরুত্ব দিন। একইসঙ্গে কিশোর-কিশোরীদেরও অনুরোধ করা হচ্ছে  যেকোনও সমস্যায় একা না থেকে পরিবার, বন্ধু বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন। নিজের অনুভূতি ভাগ করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়।

    অনুরাগের মৃত্যু আমাদের সামনে বড় প্রশ্ন রেখে গেল— আমরা কি তরুণ প্রজন্মের উপর অতিরিক্ত চাপ চাপিয়ে দিচ্ছি? তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে কতটা মূল্য দিচ্ছি? হয়তো সময় এসেছে পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার। এক তরুণের অকাল মৃত্যু গোটা সমাজের জন্য সতর্কবার্তা। অনুরাগের চলে যাওয়া যেন আমাদের শিখিয়ে দেয়— সাফল্য মানে শুধু ডিগ্রি নয়, বরং সুখী এবং মানসিকভাবে সুস্থ জীবন গড়া।
  • Link to this news (আজকাল)