মৃত্যু হল পায়ের ভৃত্য, আফগান কিশোরের ভাগ্য দেখে সকলেই অবাক
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবৈধভাবে বিমানে যাত্রী হওয়ার জন্য চাকা বা ল্যান্ডিং গিয়ারের ফাঁকা জায়গায় লুকিয়ে পড়া অনেকের কাছে শেষ আশ্রয়। আফগানিস্তানের কুন্দুজ জেলার ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর সম্প্রতি এমনই এক মরিয়া চেষ্টায় কাবুল থেকে দিল্লি পৌঁছে বেঁচে ফিরেছে। কাম এয়ারের বিমানের পেছনের ল্যান্ডিং গিয়ার কম্পার্টমেন্টে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাটিয়েছে সে। যেখানে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং অক্সিজেন থাকে অতি স্বল্প। অবাক করার খবরটি হল সে অক্ষত অবস্থায় ধরা পড়ে দিল্লিতে অবতরণের পর।
যাত্রীবাহী বিমানের ককপিট ও কেবিন সবসময় চাপ-নিয়ন্ত্রিত থাকে। কিন্তু চাকা বা গিয়ার বগির মতো জায়গাগুলো একেবারেই চাপহীন। প্রায় ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় বাতাস এতটাই পাতলা যে শ্বাস নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। অক্সিজেনের স্বল্পতা বা হাইপোক্সিয়া দ্রুত অজ্ঞান করে দেয় মানুষকে, আর তীব্র শীতে শরীর জমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন–এর তথ্য বলছে, ১৯৪৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নথিভুক্ত ১১৩টি স্টোওয়ে প্রচেষ্টার ৭৬ শতাংশেই মৃত্যু ঘটেছে। বেঁচে ফিরেছে মাত্র ২৪ শতাংশ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রেই মৃতদেহ সাগরে বা দূরবর্তী অঞ্চলে পড়ে যায়, ফলে প্রকৃত সংখ্যাটা হয়তো আরও বেশি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২০টি চেষ্টা নথিভুক্ত হয়েছে, যেখানে গড়ে বেঁচে ফেরা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে।
তবু কিছু ব্যতিক্রম নজর কেড়েছে। ২০২২ সালে এক কেনিয়ান যুবক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডস পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কার্গো বিমানের নোজ হুইল ওয়েলে লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচে যান। এটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম স্টোওয়ে বেঁচে থাকার রেকর্ড। তবে তিনি মারাত্মক হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হন।
এফএএ–এর এক গবেষণা জানায়, বিমানের টেকঅফের পর গরম হাইড্রোলিক লাইন ও চাকার ঘর্ষণজনিত উষ্ণতা কিছু সময়ের জন্য আশ্রয়দাতাকে বাঁচিয়ে রাখে। উঁচুতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়, ফলে দেহ হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মস্তিষ্ক প্রায় অচেতন অবস্থায় চলে যায়। এই অচেতন ও শীতল অবস্থা শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে টিকে থাকার সম্ভাবনা সামান্য বাড়ে। অবতরণের সময় উচ্চতা ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে অনেক সময় অজ্ঞান ব্যক্তি আবার ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে ওঠে।
তবে ঝুঁকি কম নয়। ল্যান্ডিং গিয়ার খোলার সময় অনেকেই নিচে পড়ে গিয়ে মারা যান। আবার দ্রুত চাপ পরিবর্তনের কারণে ডিকম্প্রেশন সিকনেস বা রক্তে নাইট্রোজেন বুদবুদ তৈরি হয়, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
বেঁচে ফিরলেও অনেক স্টোওয়ে ভোগেন। কানের শ্রবণশক্তি হ্রাস, হিমশীতল তাপমাত্রার কারণে হাত-পা বিকল হওয়া, এমনকি মস্তিষ্ক বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত তরুণ, পাতলা ও কম ওজনের মানুষদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি।
এমন মরিয়া প্রচেষ্টার পেছনে থাকে জীবনের নিরাপত্তা বা উন্নত ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য কিংবা আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ জীবন বাজি রেখে এমন অমানবিক যাত্রা বেছে নেয়। দিল্লিতে পৌঁছানো আফগান কিশোরও আসলে ইরান যেতে চেয়েছিল, ভুলবশত ভারতগামী বিমানে চেপে বসেছিল। তার এই অবিশ্বাস্য বেঁচে ফেরার কাহিনি আবারও প্রমাণ করে, হতাশ মানুষ ভালো জীবনের খোঁজে কীভাবে মৃত্যুকেও চ্যালেঞ্জ জানায়।