আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার কর্ণাটক হাইকোর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স কর্তৃপক্ষের করা একাধিক আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাকাউন্ট ও পোস্ট ব্লক করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল সংস্থাটি। তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতের ভেতরে কার্যরত কোনও সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি আইন ও নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে কাজ করতে পারবে না।
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, ডিজিটাল মাধ্যম দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব সমাজ ও রাজনীতির উপর গভীর। তাই "সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।"
এদিন রায়ে বলা হয়, এক্স-সহ যেকোনও বিদেশি প্ল্যাটফর্ম যদি ভারতে ব্যবসা করতে চায়, তবে তাকে এখানকার আইন মানতে হবে। আদালত মন্তব্য করে, “ভারতের বাজারকে কোনও সংস্থা নিজের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”
কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভারতের সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে যে বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিদেশি সংস্থা বা প্ল্যাটফর্ম এই অধিকার দাবি করতে পারবে না।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, “আমেরিকান জুরিসপ্রুডেন্স ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় আনা যাবে না।” আদালতের মতে, এক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও ভারতে আসলে কেন্দ্রের জারি করা টেকডাউন অর্ডারগুলিকে মানতে অস্বীকার করছে। বেঞ্চ মন্তব্য করে, “প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক না কেন, নিয়ন্ত্রণের কাঠামোও ততটাই বিকশিত হতে হবে।” এপ্রসঙ্গে আদালত ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি বিধির উল্লেখ করে জানিয়েছে যে এই নতুন বাস্তবতাকে নিজস্ব ব্যাখ্যার আলোকে দেখতে হবে।
আদালত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, “অ্যালগরিদম নিয়মিতভাবে তথ্যপ্রবাহকে আকার দিচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই বিপজ্জনক দিক নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কি না?” বেঞ্চের মতে, সমাজে বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভুয়ো খবর বা ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়েছে, “কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মই দেশের আইন থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না।” বেঞ্চ আরও যোগ করে, “যে কেউ ভারতে ব্যবসা করতে চাইলে তাকে ভারতীয় সংবিধান ও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।” এভাবে আদালত স্পষ্ট করেছে যে সোশ্যাল মিডিয়ার মুক্ত প্রবাহের পাশাপাশি এর সম্ভাব্য বিপদের দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। এক্সের আবেদনের খারিজ হওয়ার পর এখন স্পষ্ট ভারতে কার্যরত বিদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।